অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। অবসরপ্রাপ্ত এই সচিব বলেন, এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না।
শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন তিনি, যদিও উপদেষ্টাদের নাম উল্লেখ করেননি।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি।
‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সেমিনারে প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুস সাত্তার বলেন, “আমি খুবই হতাশ। আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে, কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও প্রমাণ আছে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” উপস্থিত কর্মকর্তারা এ সময় ‘ঠিক ঠিক’ বলে হাততালি দেন।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় অনভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের হাতে দেওয়ার সমালোচনা করেন।
সাবেক সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্কুলের জমির নামজারিতে ৩০ লাখ টাকা এবং ঢাকার আশপাশের একজন ইউএনও একটি কারখানার লে আউট পাশ করতে ২০ লাখ টাকা দাবি করেছেন।
তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর অফিসে আসেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে তিনি নোটিশ দিয়ে ইন–সার্ভিস কর্মকর্তাদের অফিসে আসা নিষিদ্ধ করেন।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব ও বিপিএটিসির রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, আব্দুস সাত্তার দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং নিশ্চয়ই প্রমাণ আছে। সরকারের উচিত ওই আট উপদেষ্টা চিহ্নিত করা।
সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনায় গত সরকারের সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের অনিয়ম–দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠে আসে। বক্তারা ভবিষ্যতে যাতে কর্মকর্তারা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করেন সে আহ্বান জানান।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমানসহ অনেকে।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্যে স্বজনদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন। শহীদ শাহরিয়ার খানের চিঠি আগামী বছর থেকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেন মোখলেস উর রহমান।
বক্তারা বলেন, প্রশাসনকে রাজনীতি থেকে দূরে রেখে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অতীতের মতো অনিয়ম আর না ঘটে।