• ৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে খাদ্যশস্য মজুদ আছে,খাদ্য মন্ত্রণালয়

বর্তমানে চাল ও গম মিলিয়ে মোট ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ

বিশেষ প্রতিনিধি,ঢাকা
প্রকাশিত আগস্ট ৭, ২০২৫, ১৩:০৪ অপরাহ্ণ
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে খাদ্যশস্য মজুদ আছে,খাদ্য মন্ত্রণালয়
সংবাদটি শেয়ার করুন....

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে চাল ও গম মিলিয়ে মোট ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।

৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমে দেওয়া এক তথ্য বিবরণীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, সরকারিভাবে বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন গম। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান এবং ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন চাল, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২ লাখ ৬১ হাজার এবং ২ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৩৩ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ হয়েছে, যা এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে সরকারি খাতে খাদ্য বিতরণ আগের বছরের তুলনায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারি গম আমদানির উৎস বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করা হয়েছে এবং চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও এসব দেশ থেকে আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।

খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে আমদানি বাড়ানো হয়েছে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ টনের বেশি খাদ্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারিভাবে খাদ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা ছিল ২৩ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং নারায়ণগঞ্জে চারটি আধুনিক সাইলো নির্মাণ শেষ হওয়ায় এই সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে তা ২৬ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই মজুদকে সন্তোষজনক না হলেও আশঙ্কাজনক বলা যায় না। মজুদ আরও বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই লাখ টন চাল ও গম কেনার চুক্তি এবং স্থানীয়ভাবে সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা।

পাশাপাশি, আমদানিকৃত খাদ্যশস্য যেগুলো পাইপলাইনে রয়েছে, সেগুলো শিগগিরই পৌঁছে যাবে। সাম্প্রতিক বন্যায় আশঙ্কিত ক্ষতি হয়নি বলেও জানানো হয়।

তবে উৎপাদনযোগ্য জমি কমে যাওয়ায় সরকারকে ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।

বর্তমানে খাদ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা ২২ লাখ টন এবং সেটি বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। খাদ্যশস্যের গুদামজাত সক্ষমতা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত দেশে সাতটি সাইলো নির্মাণাধীন রয়েছে, প্রতিটি সাইলোতে ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে। তবে কিছু সাইলো এমন জায়গায় নির্মিত হয়েছে, যেখানে তা প্রয়োজন ছিল না। যেমন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাইলোতে মাল পরিবহন ব্যয়বহুল হবে। এটি আগের সরকারের এক মন্ত্রীর ইচ্ছায় করা হয়েছে বলে জানা যায়।

ময়মনসিংহের অবস্থাও প্রায় একই; সেখানে রেলপথ পরবর্তীতে নির্মিত হয়েছে। সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে এই সাইলোগুলো খাদ্য মজুদে বড় ভূমিকা রাখবে।

পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (পিএফডিএস) এর আওতায় ওএমএস কার্যক্রম এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। রাজধানীসহ সারাদেশে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালু রয়েছে।

জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গঠিত মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে কর্মসূচির বাস্তবায়ন হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলে, ওএমএস ট্রাকসেলের মাধ্যমে চাল, আটা এবং সবজি বিক্রির প্রস্তুতিও সরকারের রয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট এলাকায় সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করা হবে।

এছাড়া গত ৯ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চিনির আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে, যার ফলে চিনির আমদানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।