
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শিশু ও পাইলটসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭১ জন।
দুর্ঘটনাটি ঘটে আজ দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে। এর আগে, দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর ১টা ২২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উত্তরা, টঙ্গী, পল্লবী, কুর্মিটোলা, মিরপুর ও পূর্বাচল ফায়ার স্টেশনের অন্তত ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্যও উদ্ধারকাজে সহায়তা করেন।
বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। হতাহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বার্ন ইনস্টিটিউট, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, সিএমএইচ, লুবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আইএসপিআর-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর বিবরণ:
-
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: আহত- ৮, নিহত- ০
-
বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত- ৭০, নিহত- ২
-
সিএমএইচ: আহত- ১৭, নিহত- ১২
-
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল: আহত- ১, নিহত- ২
-
লুবনা জেনারেল হাসপাতাল: আহত- ১১, নিহত- ২
-
উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল: আহত- ৬০, নিহত- ১
-
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: আহত- ১, নিহত- ০
-
ঢাকা মেডিকেল কলেজ: আহত- ৩, নিহত- ১
বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ৪৮ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জন আইসিইউতে রয়েছেন। শিশুরা এই ঘটনায় ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯ বছর বয়সী নাফিসের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আরও অনেক শিক্ষার্থী ৩০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় স্কুলে ক্লাস শেষ হলেও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক টিচার্স রুমের পাশে অবস্থান করছিলেন। বিমানটি ভবনের দ্বিতীয় তলার কোচিং ও অফিস কক্ষে আঘাত হানে।
এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক শোকবার্তায় বলেন, “এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।”
ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে: ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭।
প্রসঙ্গত, এ দুর্ঘটনাটি সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।