• ১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল সংশোধন

অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ০০:১১ পূর্বাহ্ণ
উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল সংশোধন
সংবাদটি শেয়ার করুন....

আজ উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আকাশ পথে পরিবহন খাতে যাত্রীর ৮০ শতাংশের বেশি অভিবাসী কর্মী। এই দু’টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশের বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল এজেন্সি খাতে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি অভিবাসী কর্মীদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত হবে এবং যাত্রীসেবা হবে আরো আধুনিক, নিরাপদ ও জনবান্ধব।

বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের আইনে একাধিক যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো ‘যাত্রী সেবা নিশ্চিতকরণ’ শব্দগুচ্ছকে আইনের দীর্ঘ শিরোনাম ও প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যাত্রীদের নিরাপত্তা, সুবিধা ও অধিকার সংরক্ষণে আইনি দায়বদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি এয়ার অপারেটরের জন্য সাধারণ বিক্রয় প্রতিনিধি (GSA) নিয়োগ ঐচ্ছিক করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই সঙ্গে দেশি এয়ার অপারেটরদেরও GSA নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। টিকিট বিতরণে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে Global Distribution System (GDS), New Distribution Capability (NDC) এবং API-ভিত্তিক ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যা টিকিট ব্লকিং, কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ করবে। প্রথমবারের মতো এয়ার অপারেটর কর্তৃক ট্যারিফ দাখিল ও মনিটরিং বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস, Sustainable Aviation Fuel (SAF) ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে। অধ্যাদেশটিতে সরকারকে একটি ‘বেসামরিক বিমান চলাচল অর্থনৈতিক কমিশন’ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বিমানবন্দরের ফি, চার্জ, রয়্যালটি, প্রিমিয়াম ও ভাড়ার হার নির্ধারণ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও ন্যায্য মূল্যনীতি নিশ্চিত করা হবে। অধ্যাদেশটিতে সাইবার সুরক্ষা ও ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন ও ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে যা বেসামরিক বিমান খাতকে স্মার্ট ও প্রযুক্তিনির্ভর সেবাবান্ধব করে তুলবে। পাশাপাশি অধ্যাদেশটি শিকাগো কনভেনশন, ICAO পরিশিষ্টসমূহ ও বৈশ্বিক সুশাসন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা দেশের বেসামরিক বিমান খাতকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আরো সক্ষম করে তুলবে।

অন্যদিকে, ট্রাভেল ব্যবসায় অবৈধ অর্থ লেনদেন, মানি লন্ডারিং, টিকিট মজুতদারি, প্রতারণা ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে এবং বিশেষত অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণীত হয়েছে।

অধ্যাদেশটিতে বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা দূর করে নতুন অধ্যাদেশে নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিতের ১১টি নতুন কারণ যুক্ত করা হয়েছে। অবৈধ টিকিট বিক্রয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অননুমোদিত লেনদেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, তৃতীয় কোনো দেশ হতে টিকেট ক্রয়-বিক্রয়, গ্রুপ বুকিং/ টিকিটিংয়ের ক্ষেত্রে টিকিট কনফার্মের পর যাত্রীর তথ্য পরিবর্তনকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, অভিবাসী কর্মী ও যাত্রীদের সাথে প্রতারণা বা হয়রানি রোধে কঠোর শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সরকারকে প্রমাণপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কোনো ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তদুপরি, প্রতারণা বা আর্থিক আত্মসাতের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।

এই দু’টি অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল ব্যবসায় শৃঙ্খলা, আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে টিকিটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, অভিবাসী কর্মী ও সাধারণ যাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং পর্যটন খাতে সুশাসন ও আন্তর্জাতিক মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এর ফলে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকতা, স্বচ্ছতা ও যাত্রীবান্ধব পরিবেশ আরো জোরদার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।