রাজধানীর অভিজাত উত্তরা মডেল টাউন ও তুরাগ এলাকাকে ঘিরে চোরাগোপ্তা দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব গড়ে উঠেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঢাকা-১৮ আসনের এই অঞ্চলগুলোতে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, দলবাজি, হরিলুট এবং সন্ত্রাস বাড়ছে বলে জানা গেছে। এলাকাভিত্তিক ছয়টি থানাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির চাঁদাবাজ, সুবিধাভোগী ও দালালরা গড়ে তুলেছে শক্তিশালী আস্তানা।
তথ্যসূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, উত্তরা, তুরাগ, বিমানবন্দরসহ আশেপাশের এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক, জুয়া, নারী ব্যবসা ও ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, প্রতিদিন এই ছয় থানার এলাকায় কয়েক কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। প্রশ্ন ওঠে—এই বিপুল অর্থ যায় কোথায়? কারা ভাগ পায় এই অর্থ থেকে? কে তাদের গডফাদার? কোথা থেকে আসে এত শক্তি?
বুধবার সকালে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরা বিভাগের চাঁদাবাজি ও দখলদারির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে উত্তরা ও তুরাগের বিভিন্ন এলাকা—ক্লাব, বার, কাঁচা বাজার, রেল স্টেশন, ফুটপাত, সরকারি জমি, বিআরটিএ অফিস, পাসপোর্ট অফিসসহ বহু জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও ট্রাক স্ট্যান্ড।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উত্তরা ও তুরাগ এলাকায় কয়েক হাজার লেগুনা, রিকশা ও অটোরিকশা মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়ে চলছে। পুলিশের মাঝে মাঝে অভিযান চালানো কেবল দেখানোর জন্য বলে তারা মন্তব্য করেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা, প্রভাবশালী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী, যারা বিভিন্ন ক্লাব, বার, ফ্ল্যাট ও রেস্টুরেন্টে জুয়ার আসর পরিচালনা করছেন। উত্তরা ক্লাব, রয়্যাল ক্লাব, এভিয়েশন ক্লাবসহ অনেক জায়গায় প্রতি রাতে চলে জুয়া, নারীদের মাধ্যমে অনৈতিক কার্যকলাপ এবং উচ্চবিত্তদের ভিড়।
এদিকে, রাজউকের খালি জমিতে অবৈধ দোকানপাট ও ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তুলে মাসিক ভিত্তিতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে একটি সংগঠিত সিন্ডিকেট। সিটি করপোরেশন, পুলিশ, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের মদদে চলছে এই কার্যকলাপ।
তুরাগ থানার ১৬ নম্বর সেক্টরের রাজউকের জমিতে গড়ে তোলা বালুর ট্রাক স্ট্যান্ডটি এখন দুই ভাগে বিভক্ত—বরিশাল গ্রুপ ও স্থানীয় গ্রুপ। বরিশাল গ্রুপের ট্রাক বেশি হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণও বেশি।
বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক দল নেতা মনছুর এবং তার সহযোগীরা প্রতিটি ট্রাক থেকে ২-৩ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। অথচ জমিটি রাজউকের মালিকানাধীন।
সম্প্রতি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযানে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর, অপহরণ ও সন্ত্রাসের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন চাঁদাবাজ মিলন, মাসুদ রানা, কাজী জোবায়েরসহ একাধিক অপরাধী, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।