তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫’ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ কেবল খাদ্যনিরাপত্তার সংকটেই নয়, স্বাস্থ্যকর বা সুষম খাদ্য গ্রহণের দিক থেকেও পিছিয়ে আছে। যদিও গত সাত বছরে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, তবুও দেশের প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাচ্ছে না।
বর্তমানে দেশের ১০ শতাংশেরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রতিবেদন দুটি বাংলাদেশের খাদ্যসংকটের একটি স্পষ্ট চিত্র উপস্থাপন করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, এসব তথ্য গভীরভাবে ভাবনার বিষয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৩টি খাদ্যসংকটপীড়িত দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ২৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকটে থাকা শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে—নাইজেরিয়া, সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়া। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে রয়েছে গাজা উপত্যকা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, ইয়েমেন ও হাইতি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার শতভাগ মানুষ বর্তমানে তীব্র খাদ্য অনিরাপত্তার মুখোমুখি। এছাড়া দক্ষিণ সুদান ও সুদানের অর্ধেকের বেশি এবং ইয়েমেন ও হাইতির প্রায় অর্ধেক জনগণ চরম খাদ্যসংকটে দিন পার করছে।
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বলতে বোঝানো হয়েছে ব্যক্তি বা পরিবারের পর্যায়ে অর্থ বা অন্যান্য সম্পদের অভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহে সীমাবদ্ধতা।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৪ শতাংশের বেশি, অর্থাৎ প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাচ্ছে না। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ, সাত বছরে উন্নতমানের খাবার না পাওয়ার হার প্রায় ১৯ শতাংশ কমেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য না পাওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত ওজন কম থাকার হার বাংলাদেশে ১০ শতাংশ। ভারতে এ হার ১৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৭ শতাংশ। একই বয়সী শিশুদের মধ্যে খর্বকায়তার হার বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ, ভারতে ৩৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানে প্রায় ৩৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি এখনো অপুষ্টির শিকার। তবে গত দুই দশকে এই অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অপুষ্টির দিক দিয়ে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে থাকলেও, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে।