• ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ কবে

ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশিত আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
জুলাই সনদ কবে
সংবাদটি শেয়ার করুন....



চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন কবে হবে—ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিসরে এটি এখন অন্যতম বড় প্রশ্ন।

জুলাই সনদ প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন শুরু থেকেই জানিয়েছিল, তারা জুলাইয়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চায়। তবে জুলাই পেরিয়ে আগস্টের মাঝামাঝি এসে দেখা দিয়েছে সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর বড় মতপার্থক্য। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত ছয় মাস মেয়াদি ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। সেদিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, আগস্টে সনদ প্রণীত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

কমিশন ইতিমধ্যে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছে এবং দলগুলো মতামতও দিয়েছে। জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল দাবি করেছে—সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে এবং নির্বাচন সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। কেউ কেউ বলেছে, আইনি ভিত্তি না থাকলে তারা সনদে সই করবে না। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দেওয়া হলেও জুলাই সনদে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জটিলতার মধ্যে রবিবার থেকে কমিশন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া শুরু করেছে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকের সঙ্গে আলোচনা হয়।

জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এই আলোচনায় কমিশন জানায়, জুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা ও বাস্তবায়নের উপায় খুঁজে বের করতেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং আরও বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হবে। এরপর সেগুলো প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও পাঠানো হবে। পরে সংশোধিত খসড়া দলগুলোকে পাঠানো হবে।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, জুলাই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে নতুন করে আলোচনা শুরু হচ্ছে—প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে, এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায়। সেই আলোচনার পর দলগুলোর সই নিয়ে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞরা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন—গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, অধ্যাদেশ জারি বা সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স গ্রহণ। তবে অধ্যাদেশে বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছেন তারা, যা রাজনৈতিক অনৈক্য বাড়াতে পারে।

প্রথম দফায় ১৬৫ প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, যার কিছু সরকার ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। দ্বিতীয় দফায় সাংবিধানিক ২০ বিষয়ে আলোচনা হয়—১১টিতে সর্বসম্মতি, ৯টিতে ভিন্নমতসহ সিদ্ধান্ত। ২৫টি বিষয়ে আলোচনা হয়নি মতপার্থক্যের কারণে।

গত বছরের অক্টোবরে ছয় সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ফেব্রুয়ারিতে তারা প্রতিবেদন দেয়। ঐকমত্য তৈরির জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়, যা ছয় কমিশনের সুপারিশ দুই ভাগে ভাগ করে কাজ করছে।

পাঁচ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ শেষ, সুপারিশের জন্য ধন্যবাদ

সরকার পাঁচটি সংস্কার কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। এর মধ্যে চারটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল—শ্রম, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ মে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে কমিশনগুলোর দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।