• ৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প বললেন, ‘গাজা দখল ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত’, যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেবে না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ৬, ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ
ট্রাম্প বললেন, ‘গাজা দখল ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত’, যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেবে না
সংবাদটি শেয়ার করুন....

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি দখল করতে চায়, তাহলে সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত—এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করবে না।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি এখন গাজার মানুষদের খাবার সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি। অন্য সব সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকেই নিতে হবে।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন সময় এলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনার তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে গাজার বড় একটি অংশ ইসরায়েলের সেনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিনিয়ত বোমা হামলা, খাদ্য সংকট ও ধ্বংসের মধ্যে দিন কাটছে গাজার সাধারণ মানুষের।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের গাজার অধিকাংশ অঞ্চল থেকে জোর করে সরিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় ৮৬ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে লাখো মানুষ বাসস্থানের সংকটে পড়েছে।

এদিকে, গাজায় এখনো হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের হাতে কিছু ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে। ফলে গাজা পুরোপুরি দখল করা হলে এসব বন্দির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তিরক্ষা বিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়েনচা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গাজা পুরোপুরি দখলের চেষ্টা করলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। তার মতে, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে গাজাকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

উল্লেখযোগ্য, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করলেও এখনো তারা গাজার আকাশসীমা, প্রবেশপথ এবং জলসীমার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। ফলে কার্যত গাজা এখনো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন—এমনটাই মত আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতারা অনেক আগে থেকেই গাজায় পুনরায় সেনা মোতায়েন ও ইহুদি বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও গাজার সব ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদের ইঙ্গিত দিয়েছেন একাধিকবার।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ নির্মাণ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেই তার এই মন্তব্যকে “জাতিগত নির্মূলের প্রকাশ্য সমর্থন” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

বর্তমানে গাজা ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মার্চ থেকে ইসরায়েল প্রায় সব ধরনের ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রেখেছে। কিছু অল্পসংখ্যক মানবিক কেন্দ্রই এখন গাজার মানুষের শেষ ভরসা, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চালু রয়েছে।

তবে এই মানবিক সংকটের মাঝেও ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরায়েল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।