শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের এড়িকাটি গ্রামের মোঃ আব্দুল জব্বার আলী পাইকের ছেলে আবুল বাশার পাইক–এর হঠাৎ অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন গ্রামে বাড়ি–বাড়ি নারিকেল, সুপারি, খেজুরের গাছ ও বিভিন্ন বাগান-ঝোপঝাড় পরিস্কার করে জীবিকা নির্বাহ করা বাশার আজ কোটি কোটি টাকার মালিক—এমন অভিযোগ উঠতেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার প্রকৃত আয়ের উৎস নিয়ে।
হঠাৎ বাড়তি সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবনযাপন
স্থানীয় সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাশার ঢাকায় একটি আধুনিক ফ্ল্যাট/বাড়ি ক্রয় করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে মোটা অঙ্কের টাকা ডিপোজিট রয়েছে বলেও জানা গেছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ—আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারি নিয়ে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করেছেন। এসব মাধ্যমেই তার সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে বলে ধারণা করেন অনেকে।
২০ লাখ টাকা ধার ও রাজনৈতিক প্রভাব ও লেনদেনের
অভিযোগ আছে, ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা এবং বর্তমানে ইসলামপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন মোল্লার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বাশার প্রায় ২০ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লার সন্ত্রাস লালন পালন করার ইতিহাস নতুন নয় তিনি ৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দিতেন শরীয়তপুরে। তখন নড়িয়া উপজেলার সেনের বাজারে ভোট চুরি করতে গিয়ে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধরা পরেছিলেন এমন তথ্য একাধিক সূত্রে জানা যায়। তিনি ইসলামপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ এমপি নাঈম রাজ্জাকের প্রভাব খাটিয়ে ভোট চুরি করে ডিক্লার দিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। সেই ২০ লক্ষ টাকা ফেরত পাওয়া এবং বিভিন্ন মামলা-হামলা থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে আবুল বাশার উপজেলায় বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
এমনকি এক বিএনপি নেতা মেহেদী সরদারের বাবার চিকিৎসার জন্য তিনি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন, যার বিনিময়ে রাজনৈতিক সুরক্ষা পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখিত নেতা ডামুড্যা পৌরসভা এলাকায় বসবাস করেন এবং মিয়া নুরুদ্দিন অপুর গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বর্তমান সহযোগী শাহাদাত উকিল, মেহেদী সরদার, হান্নান মাতবর সকলেই বিএনপি'র কর্মী। আওয়ামী লীগের সময় তার সহযোগী ছিল আবুল হোসেন মোল্লা, নান্নু সর্দার, মোস্তফা সদ্দার, মজিবর চোরা, ও কনেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিস মাদবর ও ডামুড্যা উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মাঝি । এই সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের পাওয়ার খাটিয়ে সে জনগণের খাল ভরাট করে বাড়ি করেছে, এতে করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া খালের পাড়ে থাকা মূল্যবান সরকারি গাছ সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে রাতের আঁধারে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রকাশিত হলে দ্রুত ধামাচাপা দেওয়া হয়।
এছাড়া তিলই নিবাসী মরহুম শামসুদ্দিন আহমেদ মোল্লার প্রায় ৫ করা জমি দখল ও গাছ গাছালি কেটে নিয়েছে ভূমিদস্যু আবুল বাশার এমন অভিযোগও রয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ বিনিয়োগ
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, বাশার চক্রবৃদ্ধি হারে সুদে টাকা বিনিয়োগ করেন এবং তার বড় অংশ যায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে এলাকার অপরাধচক্র আরও শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী যুবলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান
সম্প্রতি আওয়ামী যুবলীগ থেকে সরে এসে বাশার বিএনপিতে যোগদান করেছেন। উপজেলা বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপুর নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্ত হচ্ছেন এবং পোস্টারে নিজের ছবি সম্বলিত প্রচারণাও চালাচ্ছেন ও অর্থ বিনিয়োগ করছেন । এতে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আগামীতে আবুল বাশার পাইক ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া তিনি বলে বেড়াচ্ছে এই নির্বাচনে তার ব্যয় ৩ কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছে। ইতিমধ্যেই মিয়া নুরুদ্দিন অপু ইউনিয়ন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকার গরু জবাই করে মানুষকে খাওয়াচ্ছেন।
তদন্ত দাবি সুশীল সমাজের
ডামুড্যা উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন—
“একজন সাধারণ শ্রমজীবী ব্যক্তি কিভাবে অল্প সময়ে কোটি টাকার মালিক হলেন তা অবশ্যই তদন্ত করা উচিত। তার অবৈধ আয়ের উৎস, রাজনৈতিক লেনদেন এবং মাদকচক্রে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।”
তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর