আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের মাঠ সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এ লক্ষ্য ঢাকা -১৮ সংসদীয় আসন থেকে সবশেষ কে পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন (টিকিট) —এমন প্রশ্নে বর্তমানে সরগরম স্থানীয় রাজনীতি। এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপির থেকে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ জন নেতা-কর্মী নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব সম্ভাব্য ৫ প্রার্থীকে ধানের শীষের প্রচারণার জন্য ‘গ্রীন সিগন্যাল’ দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ক্লিন ইমেজের তৃণমূল পর্যায়ের একজনকে চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া হবে। এমনটাই বলছে- বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের হাইকমান্ড এবং দলীয় নীতিনির্ধারকরা। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক দলীয় তথ্য সূত্রের।
আজ শুক্রবার বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, গত সোমবার (২৭ অক্টোবর, ২০২৫) রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ ৫ বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সভা করেছেন। ওই সভায় ঢাকা -১৮ আসন থেকে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে ডাকা হয়। গুলশানের ওই সভায় অন্যান্যদের মতো- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব হাজী মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এস, এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এম, কফিল উদ্দিন আহমেদ, মো: আফাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান শেগুনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ওই বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা অংশ নেয়।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনীতি দলগুলো বলছে, সম্প্রতি এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা -১৮ আসন থেকে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী দলের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী এবং অন্যান্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে দলীয় উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা- সমাবেশে অংশ নিয়ে দলের পক্ষে ভোট চাইছেন। বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছে, কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব যাকেই মনোনয়ন দেবে, তৃণমূল পর্যায়ের সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবেন। যদিও প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকে অনেকে নিজেদের অনুসারী গোষ্ঠী নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুসারীদের তদবির ও লবিং মনোনয়ন প্রাপ্তিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গেল ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ গুলশানের সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক না কেন, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এবারের নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া মানে এখনও নিশ্চিত মনোনয়ন নয়। মাঠপর্যায়ে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দলীয় আনুগত্য, অতীত ভূমিকা এবং ২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ টিম প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে। সবশেষে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন কে? সেই জন্য করতে হবে অপেক্ষা। তৃণমূল পর্যায়ের ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা এবং দলীয় সম্ভব্য প্রার্থীরা মনে করছেন, সময়ই দেবে তার জবাব। তবে, বিএনপি থেকে সম্ভাব্য এমপি মনোনয়ন প্রার্থীরা রাত দিন বিভিন্ন এলাকায় মিটিং মিছিল, উঠান বৈঠক, দলীয় লিফলেট বিতরণ ও সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা -১৮ আসনের প্রতিটি পাড়া মহল্লা, হোটেল চাইনিজ রেস্তোরাঁ, চা-দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়িতে। আবার কেউ কেউ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের একটাই প্রশ্ন- ধানের শীষ প্রতীকের শেষ হাসি কার! কে সেই সৌভাগ্যমান ব্যক্তি। এনিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা।
অপরদিকে, ঢাকা -১৮ আসনে জামায়াতে ইসলামী দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। জামায়াতের এমপি পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক। জামায়াতে ইসলামী থেকে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় প্রার্থী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম ইতোমধ্যেই দলীয় প্রার্থীতা ঘোষণার পর তিনি ভোটের জন্য মাঠে নেমে পড়েছে এবং দিবারাত্রি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারেদ্বারে। ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের ধারণা সঠিক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা এই আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। এমনটি দাবি তাদের। তাদের ধারণা, ধর্মপরায়ণ এ এলাকার জনগণ তথা ভোটাররা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে রায় দিবে। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন তা এখনো চূড়ান্ত করেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সনে তৎকালীন ঢাকা-৫ (বৃহত্তর উত্তরা ও তৎপার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়নে এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ২০২০ সালে ঢাকা- ১৮ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এস, এম জাহাঙ্গীর অংশ নিয়েছিল। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১, ১৭, ৪৩ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে তৎকালীন শূন্য হয়। সে সময় পৌনে ছয় লাখ ভোটারের এ আসনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ হাবিব হাসান ও বিএনপির দলীয় প্রার্থী এস, এম জাহাঙ্গীর হোসেন দুই প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন সরকার, গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ওমর ফারুক ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মবিবুল্লাহ বাহার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর