
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউন ও তুরাগ থানা। বহু আগেই এ দুটি স্থানে ডাকঘর স্থাপন করা হলেও প্রত্যাশিত সেবা এখনও নিশ্চিত হয়নি। বর্তমানে এখানকার ডাক সেবায় মানুষের আস্থা কমছে দিন দিন। সরকার পরিবর্তন হলেও ডাক বিভাগের সেবায় কাঙ্ক্ষিত কোনো উন্নতি হয়নি। উত্তরা মডেল টাউন ডাকঘরে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩ জন কর্মী, আর তুরাগের ডিয়াবাড়ি (তারারটেক) সাব পোস্ট অফিসে আছেন মাত্র একজন কর্মী—এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সোমবার সকালে ও দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরা পশ্চিম থানার ৩ নম্বর সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠের পাশে অবস্থিত ডাকঘরটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। অন্যদিকে তুরাগের ডিয়াবাড়ি তারারটেক এলাকার পুরোনো এক বাড়িতে সাব পোস্ট অফিস চালু থাকলেও সেবা পর্যাপ্ত নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, সময়মতো চিঠি না পৌঁছানো, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, গ্রাহক হয়রানিসহ নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ—‘মডেল ডাকঘর’ হলেও এখনো পুরোনো ধাঁচে চলছে কার্যক্রম। ডিজিটাল সেবা চালু থাকলেও মানুষের কাছে তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। সেবা সম্পর্কে প্রচারণার অভাব থাকায় প্রতিদিন গ্রাহকও আসছেন খুব কম।
সকালে উত্তরা মডেল ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি গাছপালার আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে। বাইরে থেকে সরকারি অফিস চেনার উপায় নেই। ভেতরে প্রবেশ করতেই পুরোনো টেবিল, ঝাড়ু ও অব্যবহৃত জিনিসপত্র স্তূপ হয়ে আছে। ব্যাংকিং কাউন্টারের কয়েকটিতে দু-একজন গ্রাহক থাকলেও অধিকাংশ কাউন্টার ফাঁকা পড়ে ছিল। স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্টে কোনো সেবা কার্যক্রম চালু ছিল না।
প্রাইজবন্ড সংগ্রহ করতে আসা এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, “স্টাফরা নিজেদের আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, গ্রাহক সেবা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরকারি ডাকঘরে অনেক সেবা চালু থাকলেও যুগোপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়নি। মানি অর্ডার, পার্সেল, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, পোস্টাল অর্ডারসহ নানা সেবা এখানে থাকলেও গ্রাহকরা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাচ্ছেন না।
আরেক গ্রাহক বলেন, “দুপুর আড়াইটার পর কোনো চিঠি জমা নেয় না। নগদ কাউন্টারের অ্যাপ কাজ করছে না। ফলে সেবা না পেয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।”
এছাড়া, দুপুর তিনটার কিছু পরেই এক নারী কর্মীকে অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়—যা অফিস সময়সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তুরাগের চন্ডাল ভোগ গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, “তারারটেক এলাকায় সাব পোস্ট অফিস থাকলেও সেবার মান ভালো নয়। আমাদের মূল পোস্ট অফিস হলো নিশাত নগর।”
এ বিষয়ে উত্তরা মডেল ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো. সাদরুল আমিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এখানে যোগদান করেছি। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
তবে তিনি নিশ্চিত করেন, বর্তমানে এই ডাকঘরে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
স্থানীয় মানুষ ডাক বিভাগের সেবার মান উন্নয়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছে।