
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে চট্টগ্রামের বন্দর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হওয়ার পর ওয়্যারলেসে অস্ত্রধারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। সিএমপি কমিশনারের এই বার্তা ওয়্যারলেসসহ ভিডিও করে সেটি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন অন্য এক কর্মকর্তা।
গোপনীয় বার্তা বাইরে চলে যাওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন চট্টগ্রাম নগরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এই বার্তা ফাঁস করেছে সিএমপির কোনো কর্মকর্তা। হয়তো কমিশনারের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে কেউ।
সিএমপির কর্মকর্তারা জানান, ওয়্যারলেস বার্তা ফাঁস করা নতুন নয়। এর আগে সম্প্রতি একবার ওয়্যারলেস বার্তা ফাঁস হয়েছিল। সবশেষ বার্তাটি মূলত পুলিশ সদস্যদের পক্ষে গেছে। তারপরও এটি জনসম্মুখে যাওয়াটা নেগেটিভ মেসেজ। এ ঘটনার পর সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওয়্যারলেসে স্পর্শকাতর কোনো বার্তা দিতে সাহস করছেন না।
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কোনো একটি ভবনের ভেতর থেকে ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়েছে। ৩ মিনিটের ৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে একজনকে হাতে ওয়াকি-টকি ধরে রাখতে দেখা যায়।
সিএমপি সূত্র জানায়, ভিডিও ধারনকারীকে শনাক্তে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে সিএমপির একাধিক কর্মকর্তা। তারা নানা এঙ্গেলে চেষ্টা করছেন এবং নানা সমীকরণ মিলিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিওতে টাইলস মোড়ানো ফ্লোরটি শনাক্ত করা গেলে তদন্ত প্রক্রিয়া কিছুটা এগোবে বলে তাদের মত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির একজন উপ-কমিশনার (ডিসি) বলেন, ভিডিওটি প্রকাশের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এমন কড়া বার্তা পেয়ে উজ্জীবিত পুলিশ সদস্যরা। তবে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এভাবে নিজেদের সেনসিটিভ বার্তা বাইরে যাওয়া। এভাবে হলে কাজ করাটা একটু জটিল হয়ে যাচ্ছে। সিএমপির কেউ এ কাজ করেছেন। তাকে আমরা শনাক্তের চেষ্টা করছি।
এর আগে গত সোমবার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে সল্টগোলা ক্রসিং ইশান মিস্ত্রি হাট সংলগ্ন সড়কে মিছিল করে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এসময় বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ ওরফে রানা গুরুতর আহত হন।
পরদিন (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে ওয়্যারলেসে সিএমপির সব সদস্যদের উদ্দেশে মৌখিক নির্দেশনায় সিএমপি কমিশনার বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যে অস্ত্রের প্রাধিকার ছিল, ওই প্রাধিকার অনুযায়ী থানার মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবির টিমসমূহ ও সকল ফোর্স অস্ত্র ক্যারি করবে। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া এবং লাইভ এমুনিশন ছাড়া কোনো পেট্রোল পার্টি, মোবাইল পার্টি, ডিবির পার্টি, চেকপোস্ট পার্টি বের হবে না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের প্রাধিকার অনুযায়ী লাইভ এমুনিশন ছাড়া কেউ বের হবে না। প্রাধিকার অনুযায়ী অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং স্যুট পরে তারপর ডিউটিতে যাবে।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র রবার বুলেট দিয়ে কাজ হচ্ছে না। বন্দরে একজন এসআই গুরুতর আহত হয়েছেন। আরেকদিন আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। বন্দরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি লাশ ছাড়া ফেরত আসবে না। পুলিশের কোনো টহল পার্টির সামনে অস্ত্র বের করলে, আই রিপিট, সেটা ধারালো অস্ত্র হতে পারে কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র হতে পারে—অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার, দণ্ডবিধি ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত, সকল পুলিশ অফিসারের আছে। অস্ত্র কিংবা কোপ দেওয়ার আগে অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’