
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নবনির্বাচিত প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানিকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত রাখার হুমকি দিয়েছেন ওয়াশিংটনের রিপাবলিকান নেতারা। এমনকি তার নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টাও চালাচ্ছেন কিছু রিপাবলিকান।
মামদানি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তার বিরুদ্ধে এসব বাধা তিনি কি উৎরে যেতে পারবেন—এমন প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন।
তিনি মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রশ্নে সুর মিলিয়ে তাকে মিথ্যাভাবে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দেন। কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তার মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল ও বহিষ্কার করার দাবি তুলেছেন। অভিযোগ করেছেন যে তিনি ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ সমর্থন করেছেন। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস ২৯ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন, যদি মামদানি তার নাগরিকত্বের কাগজপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে তিনি নাগরিক হতে পারেন না এবং অবশ্যই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার যোগ্য নন। এক মহান আমেরিকান শহর এমন একজনের হাতে যেতে চলেছে, যিনি প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী মতাদর্শকে সমর্থন করেছেন। তিনি মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, ফ্লোরিডার রিপাবলিকান প্রতিনিধি র্যান্ডি ফাইন বলেন, বর্বররা আর দরজার বাইরে নেই, তারা এখন ঘরের ভেতরে। মামদানি মাত্র আট বছর আগে এখানে এসে নাগরিক হয়েছেন। তিনি নাগরিকত্ব পাওয়ার মানদণ্ডই পূরণ করেননি।
পলিটিফ্যাক্ট জানিয়েছে, মামদানি নাগরিকত্ব আবেদনপত্রে মিথ্যা বলেছিলেন—এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
মামদানি ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে উগান্ডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব পান। মার্কিন আইনে, প্রাপ্তবয়স্কদের নাগরিক হতে সাধারণত পাঁচ বছর দেশটিতে আইনত স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয়। নাগরিকত্ব বাতিল শুধুমাত্র আদালতের আদেশে সম্ভব, এবং ইতিহাসে এটি অত্যন্ত বিরল—যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া নাৎসিদের ক্ষেত্রে বা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, নাগরিকত্ব বাতিল একটি চরম ও বিরল প্রক্রিয়া, যা প্রমাণ করতে সরকারের ‘পরিষ্কার, অখণ্ড ও বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ লাগবে। তাদের দেখাতে হবে যে আবেদনপত্রে এমন কোনো মিথ্যা ছিল যা নাগরিকত্বের ফলাফল বদলে দেয়। মামদানির ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু হয় গ্রীষ্মে, যখন তিনি ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রার্থী হন। ওগলস জুনে এক চিঠিতে বিচার বিভাগকে অনুরোধ করেন মামদানির বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে।
তিনি অভিযোগ করেন, মামদানি ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থন লুকিয়ে নাগরিকত্ব পেয়েছেন।’ তিনি উল্লেখ করেন মামদানির ২০১৭ সালের এক র্যাপ গানের কথা, যেখানে তিনি ‘হলি ল্যান্ড ফাইভ’-এর সমর্থনে গান লেখেন। এরা পাঁচজন মুসলিম, যারা ‘হলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশন’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা পরিচালনার জন্য ২০০৮ সালে হামাসকে আর্থিক সহায়তার অভিযোগে দণ্ডিত হন। অনেক আইনজীবী মামলাটির প্রমাণকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করেন।
ওগলস ও ফাইন আরও অভিযোগ করেন, মামদানি তার ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (ডিএসএ) সদস্যপদ নাগরিকত্ব আবেদনপত্রে উল্লেখ করেননি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিএসএ কমিউনিস্ট পার্টি নয়।
এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্ভি ক্লেয়ার বলেন, ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রীরা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে সমর্থন করেন, যা কমিউনিজমের বিপরীত ধারণা।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী ম্যাককিনি বলেন, ডিএসএ সদস্যপদ কোনো নাগরিকত্ব বাধা নয়। তাছাড়া বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ না করাও প্রতারণা নয়, যদি তা আবেদন বাতিলের কারণ না হয়।
নির্বাচনের প্রচারে মুসলমানবিদ্বেষী বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স (কেয়ার)। তারা মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি ‘বর্ণবাদী ও ইসলামোফোবিক’ বলে অভিহিত করেছে। অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, ইসলামোফোবিয়া এই দেশের রাজনীতির এক স্থায়ী অংশ হয়ে গেছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর