• ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকরসহ ৩৯ দাবি

দেশব্যাপী সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত নভেম্বর ১, ২০২৫, ২০:১৫ অপরাহ্ণ
‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকরসহ ৩৯ দাবি
সংবাদটি শেয়ার করুন....

‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর, সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন, সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ৩৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এ ৩৯ দফা উপস্থাপন করেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের সিনিয়র সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহসভাপতি খায়রুল বাশার, একেএম মহসিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, মোরসালিন নোমানী, রফিক মুহাম্মদ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, সাঈদ খান, আবু বকর, অর্পণা রায়, মোদাব্বের হোসেন, খন্দকার আলমগীর, ডিএম অমর, আল আমিন প্রমুখ।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দাবিগুলো হলো:
১. ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করতে হবে।
২. অবিলম্বে স্বাধীন ও কার্যকর তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিও, সংবাদ সংস্থা, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তা কার্যত হয়নি। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। তাই বর্তমান সরকারকে দ্রুত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একইভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে। আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে এবং বর্তমান সময়ে তা-ই হচ্ছে।
৫. সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ভোগ করে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দুই দিন ছুটির ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। এতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে।
৬. সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
৭. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
৮. আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নানাভাবে হয়রানি ও হামলা-মামলার শিকার হন। এসব মামলা ঘাড়ে নিয়ে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। থানা বা কোর্ট নয়, সংবাদসংক্রান্ত সব মামলা শ্রম আদালতে করতে হবে।
৯. সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, মাল্টিমিডিয়ার জন্য একটি ‘সমন্বিত জাতীয় সংবাদমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে। এই সমন্বিত নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ভিন্ন গণমাধ্যমের জন্য ভিন্ন নীতিমালা থাকবে। অনেক নীতিমালা প্রণয়ন না করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে তা প্রয়োগ করা ও মেনে চলা সহজ হবে।
১০. সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদ সংস্থা ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজ বোর্ড করতে হবে। বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড থাকলেও টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। তাই টেলিভিশন সাংবাদিকদের চাকরি শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এটা অত্যন্ত অমানবিক।
১১. রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব স্তরে এবং আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবে তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতাও সম্ভব হবে না। বর্তমানে ব্যাপক হারে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে।
১২. কথায় কথায় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ করতে হবে এবং ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করতে হবে।
১৩. চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া অথবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের দেনা-পাওনা ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
১৪. কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে না।
১৫. মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দিতে হবে। জেলা পর্যায়ে কিছু পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বেতন দিলেও অধিকাংশ মিডিয়া হাউস উপজেলা প্রতিনিধিদের এক টাকাও বেতন দেয় না। উপরন্তু তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ দেওয়া হয়। সংবাদকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞাপনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিতে না পারলে চাকরিচ্যুত করা হয়। এটা বন্ধ করতে হবে।
১৬. তিন বছর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পদোন্নতি দিতে হবে।
১৭. সরকার ও গণমাধ্যম কর্তৃক দ্রুত সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
১৮. বছরের শুরুতে আগের বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর পর পর মুদ্রাস্ফীতি সামঞ্জস্য করে বিবেচনা করতে হবে।
১৯. পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, গাড়ি, মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বীমা থাকতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট কাভারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং দুর্ঘটনা ভাতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থায়ী সংবাদকর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বীমা ও চিকিৎসা বীমার ব্যবস্থা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা, এবং নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, বিশেষ করে আলাদা রেস্টরুম রাখতে হবে।
২০. সাংবাদিকদের তৈরি প্রতিবেদনের কারণে যেসব ফৌজদারি মামলা আছে তা প্রত্যাহার ও বাতিল করতে হবে।
২১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
২২. কোনো গণমাধ্যমকে গোয়েন্দা সংস্থা কোনো ধরনের নির্দেশনা দিতে পারবে না।
২৩. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা কোনো সংবাদমাধ্যম/গণমাধ্যম পরিচালিত হতে পারবে না।
২৪. সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের রিপোর্ট প্রতি তিন মাস অন্তর সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ওয়েজ বোর্ড কার্যকর হচ্ছে কি না তা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
২৫. সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। সাংবাদিকদের শুরুতে বেতন ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা হতে হবে এবং প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।
২৬. রেডিও, টেলিভিশনের লাইসেন্স প্রদানে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে পুরোপুরি পুনর্গঠন করতে হবে। যোগ্যতায় লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে, দলীয় বিবেচনা নয়।
২৭. কোনো সাংবাদিক যতদিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, আর কোনো প্রমাণিত আর্থিক বা নৈতিক অভিযোগ না থাকলে তাঁকে অবসর দেওয়া যাবে না।
২৮. সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে হবে।
২৯. দেশে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনও সেকেলে। আবেদনকারীদের দ্রুততম সময়ে নিবন্ধন দিতে হবে। প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। ভুলভ্রান্তি, ঘুষ দাবিসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৩০. চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর বর্তমানে প্রিন্ট পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন হার নির্ধারণ করে। অনেক শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। ভুয়া সংখ্যা দেখিয়ে বিজ্ঞাপন রেট বাড়ানো বন্ধ করতে হবে।
৩১. সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞাপন রেট বাস্তবসম্মতভাবে বাড়াতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের জন্যও প্রযোজ্য।
৩২. রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন মিডিয়াকে মালিকের ব্যক্তিগত স্বার্থ থেকে মুক্ত করতে হবে।
৩৩. কথায় কথায় সংবাদমাধ্যম ডিক্লারেশন বাতিল বন্ধ করতে হবে। সরকার কোনো সংবাদমাধ্যম বন্ধ করলে অন্তত ৬ মাস ওই মিডিয়ার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বহন করতে হবে।
৩৪. নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ সংক্রান্ত নীতিমালা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিকের তথ্য প্রাপ্তি সীমিত করবে। নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
৩৫. নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ও কর কমিয়ে সংবাদপত্রশিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স সর্বনিম্ন নির্ধারণ বা বাতিল করা যেতে পারে।
৩৬. মিডিয়াকে শিল্প ঘোষণা করে বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপন দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদের কারণে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৩৭. সাংবাদিকতাকে বাধাহীন করতে হবে। ‘ভয়হীন’ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩৮. রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩৯. কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আমরা এমন একটি পরিবর্তিত সংবাদমাধ্যম চাই, যেখানে সাংবাদিক কোনো পক্ষের চাপ ছাড়া সত্য প্রকাশ করতে পারবেন। অনুসন্ধান হবে সত্যের সমাহার এবং দায়িত্ববোধ হবে সাংবাদিকতার মূলশক্তি। একই দাবিতে সারাদেশে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।