
বিশ্বের মধ্যে নান্দনিক, আধুনিক ও আভিজাত্য বিমানবন্দর গুলোর মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যতম। নতুনত্ব ডিজাইন আর কারু কাজ দ্বারা তৈরি করা হয়েছে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল তৃতীয় টার্মিনালটি। যা কিনা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোপূর্বে বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনাল পূর্বের অবস্থায় রয়ে গেছে। বিমানবন্দরে দেশি- বিদেশি যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং যাত্রীদের চাপসহ নানাবিধ দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে তৃতীয় টার্মিনালটি করার উদ্যোগ নেয় বিগত সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য সূত্রের।
জানা গেছে, ২০২৫ সালের ১৩ আগষ্ট জাতীয় দৈনিক "জনতা, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল য় বিমান ওঠানামায় বাড়ছে ঝুঁকি " যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, বহুতল ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশনা নোটিশ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বিশেষ রিপোর্ট (সংবাদ) প্রকাশ করা হয়। এরপর নড়চড়ে বসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), বিমান উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) প্রশাসক, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সংস্থা গুলো । আজ শনিবার (২২ নভেম্বর, ২০২৫ ) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বাইপাইলে ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। কম্পন রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল তিন দশমিক তিন। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে দায়িত্বরত পেশগত সহকারী নিজাম উদ্দিন আহমেদ এই তথ্য আজ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি মাইনর ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল বাইপাইল। এরআগে শুক্রবার (২১ নভেম্বর, ২০২৫) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এদিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেল অনুযায়ী ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যা ২৬ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এঘটনায় এখনো পর্যন্ত প্রায় ৯জন নিহতসহ কয়েকশত নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশে ৭ কিংবা ৮ উচ্চ মাত্রার বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে বহুতল ভবনগুলোতে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
দৈনিক জনতায় সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিমানবন্দরের রানওয়ে সংলগ্ন ড্যান্জারজোন নামে খ্যাত- (জিরোহাঁইট) ব্যতীত তুরাগের দলিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজউকের প্রথম শ্রেণীর একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানকালে ৪/৫ টি বসতবাড়ি ভাংচুর করা হয়। এসময় স্থানীয় বাড়ির মালিক ও এলাকাবাসীরা ঐক্য বদ্ধ হয়ে অনেকটাই বাধ্য হয়ে তার প্রতিবাদ করেন। উচেছদ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজউকের কর্মকর্তা, বুলডোজার ও লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন অংশ নেয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অবৈধ স্থাপনা ভাংচুর অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালতের প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বেলায়েত হোসেন এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানকালে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সিভিল অ্যাভিয়েশন উচ্চতার সীমারেখা (আইন) লংঘন করে অনুমোদনহীন একাধিক ভবন তৈরি করা হয়েছে। এসব ভবনের রাজউকের বৈধ কোন অনুমোদন ছিল না। কয়েকটি আংশিক ভবনের একাংশ ভাংচুর করা হয়েছে। ইতিপূর্বে ভবন মালিকদেরকে নোটিশ করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন। পরোক্ষণে দলিপাড়ায় বসতবাড়ি ও নির্মাণাধীন একাধিক ঘরবাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাত বাদ ঈশা'র নামাজের পর দলিপাড়া এ এম হাইস্কুলের ভেতর আশপাশের বাউনিয়া, আহালিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় বাড়ির মালিকরা এক আলোচনা- মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মো: শরীফ খানের সভাপতিত্বে এবং জালাল হোসেন খানের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন- তুরাগ থানা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক ও এ এম হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো: আবু তাহের আবুল। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, নূরুন্নবী ভুইঁয়া, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রীণা খান, আনিছুর রহমান, মাহাবুব আলম জিয়া, মো: পিন্টু ও মো: শিশিরসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। ওই সভায় প্রায় শতাধিক বাড়ির মালিক এতে অংশ গ্রহন করে নিজনিজ মতামত পেশ করেন। এসময় স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাররা অভিযোগ করে বলেন, অভিযানকালে ওই এলাকার বিনা নোটিশ ও মাইকিং না করে মিনহাজ, শাহীন, করিম মাষ্টারসহ ৪/৫ টি বসতবাড়ি নির্মাণাধীন বাড়ি ভাংচুর করা হয়। সম্প্রতি রাজউক কর্তৃক এই উচেছদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দলিপাড়া এ এম হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের মাঠে আরোও একটি সভার আয়োজন করে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি'র সদস্য সচিব ও ঢাকা -১৮ আসনের এমপি মনোনয়ন প্রার্থী হাজী মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, তুরাগ থানা বিএনপির আহবায়ক হারুন অর রশীদ খোকাসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিন পরিদর্শন, তথ্য অনুসন্ধান ও বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী উত্তরা- উত্তরা ১৫নং সেক্টরস্থ প্রিয়াংকা হাউজিং সিটি, পাকুরিয়া, খানটেক, বাউনিয়া, দলিপাড়া, আহালিয়া, ৫, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং সেক্টরসহ তুরাগ থানার চন্ডাল ভোগ, ডিয়াবাড়ি ও শুক্রভাঙ্গা এলাকায় ব্যাঙ্গের ছাতার মতো রাজউকের বিল্ডিং কোর্ট অমান্য করে শতশত বহুতল ভবন রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া অদ্যবদি পর্যন্ত অব্যাহত আছে। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর ও রানওয়ে সংলগ্ন "ড্যান্জারজোন এ্যারিয়া" উত্তর দিকে যেমন- দলিপাড়া, আহালিয়া, বাউনিয়া, পাকুরিয়া, খানটেক, প্রিয়াংকা হাউজিং সিটি এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে - নিকুঞ্জ -১ /২, টানপাড়া, জাহিদ ইকবাল রোড, প্রধান সড়ক, লা মেরিডিয়ান, ঢাকা রিজেন্সী হোটেলসহ পাশে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বহুতল ভবন। তথ্য সূত্র গুলো বলছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে নামমাত্র ছাড়পত্র নিয়ে রাতারাতি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ চলমান আছে। রাজউকের উত্তরা অফিসের দায়িত্বশীল একজন ইন্সপেক্টর পরিচয় দিয়ে উত্তরা, তুরাগের দলিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত অসংখ্য বাড়ির মালিক ও নির্মাণাধীন বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে মোটা অঙ্কের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহল মনে করছে, গড়ে উঠা বহুতল ভবনগুলো বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে গেল ১৫-২০ বছরে প্রশিক্ষণ বিমানসহ বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এসব এলাকার উপর দিয়ে অধিকতর ঝুঁকি নিয়েই আকাশ পথে দেশি বিদেশি উড়োজাহাজ ওঠানামা করছে । এই ফ্লাইজোন দিয়ে প্রতিনিয়তই চলাচল করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা অসংখ্য উড়োজাহাজ। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ বিমানও চলাচল করতে দেখা যায়। যা কি না বিমানের জন্য হুমকি স্বরূপ।
গত প্রায় একমাস সরেজমিন পরিদর্শন ও উত্তরা ও তুরাগের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি তুরাগের ডিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে গেল ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনা। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী, শিক্ষিকা, অভিভাবকসহ অন্তত ৩৫/৩৬ জন মানুষের প্রাণহানি হয় এবং অসংখ্য লোক আহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ইতিপূর্বে উত্তরার দক্ষিণখানের সায়দাবাদ ট্রান্সমিটার ও মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া বিমান ট্র্যাজেডি : আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। এসব বিষয়ে বর্তমান সরকার, উপদেষ্টাগণ ও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিপূর্বে ও সম্প্রতি ঝুঁকি পূর্ণ এলাকাগুলোতে বহুতল ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশনার বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা হাউজিং সিটিসহ ভবন মালিকদের বেবিচকের পক্ষ থেকে একাধিক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে ৬টি ‘অধিক উচ্চতার’ ভবন চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ভবনগুলো প্রিয়াংকা হাউজিং সিটির বলে জানা গেছে । ইতিপূর্বে এসব ভবনের মালিকগনকে নোটিশ দিয়েছিল রাজউক। অনুমোদনের চেয়েও বেশি উচ্চতার এসব ভবন রানওয়ের পাশে হওয়ায় ফ্লাইট ওঠানামায় ঝুঁকি তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । সরেজমিন পরিদর্শনকালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ভবন চিহ্নিত করা বেবিচক। তাদের অবৈধ অংশ অপসারণ বা ভেঙে ফেলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ভবনগুলো বিমানবন্দরের রানওয়ে-১৪ এপ্রোচ ফানেলের পাশে (উত্তরা সংলগ্ন) অবস্থিত। এসব বিষয় গুলো বেবিচক চেয়ারম্যানের নজরে আসলে তিনি ভবনগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এ বিষয়টি অবগত করে বেবিচকের পরিচালককে (সিএনএস) পাঠানো এক চিঠিতে বেবিচক চেয়ারম্যান এগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। অপরদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে নিয়মবহির্ভূত ভবনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। চিঠিতে বলা হয়, উত্তরায় প্রিয়াংকা সিটি হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের প্লট নম্বর ৯, ১৩, ২৬, ৩০ এবং ৩৬ এবং রোড নম্বর ৩ এর ৫১ নম্বর প্লটগুলো ওএলএস (অবস্ট্রাকল লিমিটেশন সার্ফেস)-এর অনুযায়ী প্রাপ্য উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতায় করা হয়েছে। বেবিচক সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে বেবিচক তাদের ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে বলেছে। যদি তারা উদ্যোগ না নেয় তবে বিকল্প ব্যবস্থায় ভবন অপসরণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, ওএলএস বলতে প্লেন ওঠানামার আশপাশের স্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনাকে বুঝায়। ভবনগুলোর মধ্যে ১ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর প্লটটি ৩৫ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ (৭ তলা), ৯ নম্বর প্লট ৩৬ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ ফুট (৭ তলা), ১৩ নম্বর প্লটটি ৪৬ ফুটের (৪ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা), ১৩ নম্বর প্লট ৪৪ ফুটের অনুমোদন নিয়ে ৯০ ফুট, প্লট নম্বর ৩৬ মাত্র ৫৬ ফুট (৫ তলা)-এর অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এছাড়াও ৩ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর প্লটটি ৭৩ ফুট (৬ তলার) অনুমোদন পেয়ে ১১০ ফুট (১০ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ৩০ নম্বর প্লটের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। সূত্র গুলো বলছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা করার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও রেডজোন হিসেবে যে সব এলাকা রয়েছে - সেগুলো হলো রানওয়ে সংলগ্ন দলিপাড়া, আহালিয়া, বাউনিয়া, খানটেক, পাকুরিয়া, প্রিয়াঙ্কা সিটি, ডিয়াবাড়ী ও চন্ডাল ভোগ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
তথ্য অনুসন্ধান, রাজউক ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৫/৩৬ জন নিহত হন, এর অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এঘটনায় বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও নিহত হন। এই ঘটনা নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ যেটা ছিল, সেটা হলো পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনিংয়ের সময় যখন ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তাঁর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। বুয়েটের গবেষকেরা বলছেন, দেশে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে রাজধানীর প্রায় অর্ধেক ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা শহরের ৫০ শতাংশ ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ; এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অবিলম্বে খালি করে দেওয়া উচিত, বাকি ২৫ শতাংশ মধ্যম মাত্রার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মোটাদাগে বলা যায়, আমাদের হয়তো ৫০ শতাংশ ভবন ভালো, কিন্তু আমরা যদি ভাগ ভাগ করে সেটা বলতে চাই, তাহলে আবাসিক ভবনের ধরন ভিন্ন হতে পারে। সম্প্রতি রাজউকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ৪০ দশমিক ২৮ থেকে ৬৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এমন ভূমিকম্প ভোরে হলে ২ দশমিক ১ থেকে ৩ দশমিক ১ লাখ, দুপুরে ২ দশমিক ৭ থেকে ৪ লাখ এবং রাতে হলে ৩ দশমিক ২ থেকে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। একইভাবে সিলেটে যদি ৭ এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে ঢাকায় ৪০ হাজার ৯৩৫ থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রাজউকের জরিপ করা ৩ হাজার ২৫২টি ভবনের মধ্যে ৪২টিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এতে কর্ণপাত না করে ভবনগুলোতে এখনো দিব্যি ব্যবসা চালাচ্ছেন কিংবা বসবাস করছে মানুষ।
এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ।
আজ শনিবার (২২ নভেম্বর,২০২৫ ) রাজধানীর বংশালের বিভিন্ন ভবন পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। পুরাতন ভবনের ঐতিহ্য রক্ষা করেই নতুন পরিকল্পিত নগরায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ভবনের সামনে থাকা অবৈধ তাবু ও ছাউনি উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কসাইটুলীর একটি ভবনের নকশা সাত দিনের মধ্যে জমা না দিলে তা সিলগালা করা হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এক কাঠার কম জমিতে কোনো প্ল্যান অনুমোদন দেওয়া হবে না। যেসব নির্মাণ জোরপূর্বক হচ্ছে, তাদের মিটার কেটে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ চোরাই মিটার বা জেনারেটর ব্যবহার করে কাজ চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ১৩ আগষ্ট জাতীয় দৈনিক "জনতায় বিমান ওঠানামায় বাড়ছে ঝুঁকি " যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, বহুতল ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশনা নোটিশ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সরজমিন বিশেষ রিপোর্ট (সংবাদ) প্রকাশিত হয়েছিল।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর