• ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফ্যাসিস্ট পালালেও দোসর ডিজির প্রতাপ বাড়ছে

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে

সৈয়দ কামরুজ্জামান
প্রকাশিত অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ১৪:০২ অপরাহ্ণ
ফ্যাসিস্ট পালালেও দোসর ডিজির প্রতাপ বাড়ছে
সংবাদটি শেয়ার করুন....

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে বসে আবারও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে শেখ হাসিনার আমলের প্রতাপশালী কর্মকর্তা ড. বেগম সামিয়া সুলতানা। ছাত্রলীগের নেত্রী থাকা এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ও মতিয়া চৌধুরীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে শেখ হাসিনার আমলে পদোন্নতি পায় প্রকল্প পরিচালক পদে। তার ক্ষমতার অন্যতম সিঁিড় হিসেবে ব্যবহার করেন তৎকালীন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারকে। ওই সময়ের ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ মেলে কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টের ব্যাপক আপত্তিতে। ড. বেগম সামিয়া সুলতানা নিজের দুর্নীতির শাস্তির পরিবর্তে অন্তর্বতী সরকারের আমলেই উল্টো রহস্যজনকভাবে পেয়ে যায় পদোন্নতি। শেখ হাসিনা পালালেও পালায়নি ফ্যাসিস্টের দোসর খ্যাত তৎকালীন পরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা। বরং নিজের দুর্নীতি ঢাকতে মব সৃষ্টির মাধ্যমে মহাপরিচালকের পদ হতে মোঃ জালাল উদ্দিনকে অপসারণে নেতৃত্ব দেয় অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা। ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে এখনও আগের মতই অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে চলছেন সৈরাচারের দোসর খ্যাত এই কর্মকর্তা।
মোঃ জালাল উদ্দিনকে অপসারণের পরে মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়েই দুর্নীতির মহোৎসব শুরু করে দেয় ড. বেগম সামিয়া সুলতানা। এখন এই মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও পরিচালক নিজেই। নিজের লোকজন দিয়েই সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের অপরাধ রাজ্য। সম্প্রতি ৩৭ জন অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগেও অভিযোগ পাওয়া গেছে বিধি বহির্ভূত অনিয়মের। মহাপরিচালকের সংযুক্ত কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হেসেনের ইসবপুর ইউনিয়ন হতেই নিয়োগ দিয়েছেন ৯ জনকে।
কৃষি ও পরিবেশ অডিট অধিদপ্তর-এর পরিচালনায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনসিস্টটিউট-এর ২০২২-২০২৩ নিরীক্ষা বছরের হিসাব সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে উঠে এসেছে ব্যাপক দুনীতির ফিরিস্তি। এসময়ে পরিচালক হিসেবে এসব দুর্নীতি করেন বেগম সামিয়া সুলতানা। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে বেড়ে ওঠা গল্পের ইতিহাস হিসেবে জনা যায়, চাঁপাই নবাবগঞ্জে জন্ম নেওয়া বেগম সামিয়া সুলতানা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিয়হে ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নকালে যুক্ত হয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ১৯৯৮ সালে বাকৃবি ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ প্যানেলে সুলতানা রাজিয়া হল সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। শুরু হয় শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ও ঘনিষ্টতা। চাকরী জীবনে শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজন হিসেবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন হাসিনার পুরো শাসনকাল। নিজেকে জাহির করতেন “আমি শেখ হাসিনার সাথে রাজনীতি করা লোক” বলে। ফেসবুক প্রোফাইলে ব্যবহার করতেন শেখ হাসিনা তার সরকারে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তোলা ছবি। এসব সরিয়ে দিয়ে এখন সেজেছেন ছাত্রজনতার গণঅভুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে। তার বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “সরকার আমাকে ৫ই আগস্ট পরবর্তী ডিজি বানিয়েছে। কর্মজীবনে আমি পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করেছি। যারা এটা পছন্দ করছে না, প্রতিষ্ঠানটিকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারাই এখন এসব কিছু সামনে আনছে”।
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের পুরোটা সময়জুড়েই তিনি ছিলেন সুবিধাভোগী। মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেখ হাসিনার সাথে তোলা গ্রæপ ছবি সামিয়া সুলতানার ফেসবুকে কাভার ফটো ছিল। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে মিটিংয়ের পর গর্ব করে নিজেকে আওয়ামী লীগার হিসেবে জাহির করতেন। অফিসারের চেয়ে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সামিয়া সুলতানা হতাশ হন। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেন। এসআরডিআইতে দু’টি পরিচালকের পদ রয়েছে। একটিতে ক্যাডার অফিসার এবং অপরটিতে নন ক্যাডার অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। ডিজি পরিচালকের পদটি ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে, নন ক্যাডারের পরিচালক পদটি খালি রাখা হয়েছে। সাবেক ডিজি জালাল উদ্দিন ফিরে গেছেন তার মূল পদ মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে।
গত ১৩ নভেম্বর এসআরডিআই’র মহাপরিচালকের চেয়ারে বসেই বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারুক হোসেনসহ কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন দেন। ফলে তারাই এখন ডিজিকে শেল্টার দিচ্ছেন। সরকারের একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনেও এসব তথ্য পাওয়া যায়। বিগত সময়ে মুজিববন্দনা করাই যার কাজ ছিল তিনিই পেয়েছেন মৃত্তিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে প্রতাপশালী কর্মকর্তার নাম ওয়াহিদা আক্তার। ছিলেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিএস। পরবর্তীতে কৃষিসচিব। ৫ আগস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের ইতিঘটার পরেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক সচিব ছিলেন। তিনি এবং তার স্বামী তখনকার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) চুক্তিভিত্তিক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার মিলে পুরো কৃষি সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তাদেরই ঘনিষ্ঠজন ড. বেগম সামিয়া সুলতানাকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে মৃত্তিকাসম্পদ ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মহাপরিচালক করা হয়।
এসব বিষয়ে এসআরডিআই’র ডিজি সামিয়া সুলতানা বলেন, ৪০ বছর আগের বিষয় নিয়ে কেন আপনারা টানাটানি করছেন। আমি ছাত্রসংসদে নির্বাচিত ছিলাম না। কোনো এক পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি (শেখ হাসিনার সাথে) তোলা হয়।