 
     দুই অক্ষরের প্রাণঘাতী নেশার নাম ‘ড্যান্ডি। এটি এক ধরনের নেশার উপকরণ । ড্যান্ডি কোনও প্রচলিত মাদক নয়। ‘ড্যান্ডি গাম’ মূলত জুতা তৈরি ও যন্ত্রাংশ মেরামতে ব্যবহৃত এক ধরনের আঠা। বর্তমান সময়ে অল্পবয়সী পথশিশুদের কাছে জনপ্রিয় ও সস্তা নেশার উপকরণ হলো 'ড্যান্ডি'। বাজারে এ নেশার দামও বেশ সস্তা। হাত বাড়াইলে সহজে পাওয়া যায় এটি। যেকোনো হার্ডওয়্যার বা পার্টসের দোকানে মাত্র ৫ ১০, ১৫ কিংবা ২০ টাকার বিনিময়ে এটি কেনা যায়। এভাবেই পথশিশুরা ঢলে পড়ে নেশার জগতে। এর নাম 'ড্যান্ডি' নেশা। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সূত্রের।
দুই অক্ষরের প্রাণঘাতী নেশার নাম ‘ড্যান্ডি। এটি এক ধরনের নেশার উপকরণ । ড্যান্ডি কোনও প্রচলিত মাদক নয়। ‘ড্যান্ডি গাম’ মূলত জুতা তৈরি ও যন্ত্রাংশ মেরামতে ব্যবহৃত এক ধরনের আঠা। বর্তমান সময়ে অল্পবয়সী পথশিশুদের কাছে জনপ্রিয় ও সস্তা নেশার উপকরণ হলো 'ড্যান্ডি'। বাজারে এ নেশার দামও বেশ সস্তা। হাত বাড়াইলে সহজে পাওয়া যায় এটি। যেকোনো হার্ডওয়্যার বা পার্টসের দোকানে মাত্র ৫ ১০, ১৫ কিংবা ২০ টাকার বিনিময়ে এটি কেনা যায়। এভাবেই পথশিশুরা ঢলে পড়ে নেশার জগতে। এর নাম 'ড্যান্ডি' নেশা। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্থ তথ্য সূত্রের।
তথ্য অনুসন্ধ্যান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইদানিংকালে রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা থেকে খিলক্ষেত - বিশ্বরোড এলাকা জুড়ে ড্যান্ডিখোরদের উৎপাত বহুগুণ বেড়েছে। নেশাগ্রস্ত এ গ্রুপের গ্যাংয়ের দাপটে পথচারী ও নগরবাসীরা অনেকটাই আতঙ্কে থাকে। এতে করে প্রাণঘাতী নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে অল্প বয়সী পথশিশুরা।
এতে করে দিনদিন সামাজিক ভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর টঙ্গী ব্রিজ ফুটপাত থেকে শুরু করে খিলক্ষেতের বিশ্বরোডও নিকুঞ্জ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ‘ড্যান্ডি গাম’ নেশার এ ভয়াবহ দৃশ্য। প্রতিদিন বিকেল গড়াতেই শুরু হয় এই ভয়ঙ্কর আসর। ফুটপাত, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, রোড ডিভাইজার ও ওয়ার্কওয়ে বসে নেশার আসর। ড্যান্ডিখোরদের টার্গেটে থাকে পথচারীরা।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার হাউজবিল্ডিং, আব্দুল্লাহপুর, আজমপুর, বিমানবন্দর ও বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখন এই কিশোররা “ড্যান্ডিখোর গ্যাং” নামে পরিচিত। তারা দিন-রাত ফুটপাতে আড্ডা দেয়, প্রকাশ্যে নেশা করে এবং মাঝে মধ্যে তারা দলবদ্ধ হয়ে ছিনতাই বা মোবাইল চুরি করে। উত্তরা,খিলক্ষেতের বিশ্বরোড কিংবা নিকুঞ্জবাসীর কাছে এক ধরনের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এ সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা- লা মেরিডিয়ান হোটেলের আশেপাশে, ফুটওভার ব্রিজের নিচে কিংবা খাঁপাড়ার রেললাইন, কুড়িল বিশ্বরোড, বিমানবন্দর রেললাইন, বাসস্ট্যান্ড, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং ও আব্দুল্লাহপুর- টঙ্গী ব্রিজ এলাকায়—প্রতিদিনই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত রাব্বি, আরিফ, সেলিম নামে তিনজন ড্যান্ডিখোরের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানায়, আমাদের তিন জনের বাপ-মা নাই, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই আর ফুটপাতে থাকি। আমাদের কোন বাড়িঘর নাই। যেখানে যাই, সেখানেই বাড়ি। আজ এখানে, কাল অন্য জায়গায়; সব কিছু ভুলে থাকতেই মনের কষ্টে তাই ড্যান্ডি খাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ড্যান্ডিখোর এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা নিজেরা একত্রিত হয়ে দল গঠন করেছি। আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। কারও ওপর কোন বিপদ কিংবা ঝামেলা হলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। দিনের বেলায় আমরা ঘুমাই, সন্ধ্যান পর আমরা কাজের সন্ধ্যানে রাস্তায় বের হই। আমাদের দলে বেশ কিছু নারীও আছে। আমরা সবাই এক সাথে মিলেমিশে থাকি। মাঝেমধ্যে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঝামেলা করে। অনেক সময় সামনে পরলে ধরে নিয়ে যায়।
তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ড্যান্ডি
মূলত সল্যুশন নামে পরিচিত। এটাই ড্যান্ডির মূল উপাদান। এই আঠা একটি পাতলা পলিথিন প্যাকেটে ভরে সেই পলিথিনের খোলা অংশ মুখে লাগিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়ার মাধ্যমেই ড্যান্ডি সেবন করে আসক্তরা। ঢাকার রাস্তাঘাটের দুপাশে আজকাল এমন অনেক পথ-শিশুকেই দেখা যায় এভাবে পলিথিনে মুখ লাগিয়ে প্রকাশ্যে ড্যান্ডি সেবন করে। রাজধানীতে যেসব পথ-শিশু বসবাস করে, তাদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। বিশেষ করে ড্যান্ডি নামক এক ধরনের নতুন এবং সহজলভ্য মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে এসব শিশুরা। এমনকী ৮ বছর থেকে ১২ বছর বয়স্ক শিশুদের ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যেই ড্যান্ডি সেবন করতে দেখা গেছে। ঢাকায় সরকারি হিসেবে প্রায় ২ লাখ পথ-শিশু রয়েছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো একেবারে মৌলিক অধিকারের সবগুলো থেকেই বঞ্চিত এসব শিশুরা। পথেই তার ঘরবাড়ি। মা নেই, বাবা থেকেও নেই। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সৎ-মায়ের অত্যাচারে ঘর ছাড়ে সে।
সংশ্লিষ্ট ও সচেতন নাগরিকরা বলছে, পথ-শিশুদের কাছে মাদক বিক্রির জন্য একটা সিন্ডিকেট কাজ করে। ভাঙ্গারী ক্রেতারাই শিশুদের কাছ থেকে ভাঙ্গারী কিনে নেয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের হাতে মাদক তুলে দেয়। এদের বেশিরভাগই বিপথে থাকা বড়দের কবলে পড়ে মাদকাসক্ত হয়।
শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে এবং কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পথ- শিশুদের নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশটির সর্বশেষ আদমশুমারিতে ভাসমান মানুষদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, দেশটিতে ৪ লাখের মতো পথ-শিশু রয়েছে, যার অর্ধেকই অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকাতে। অন্যদিকে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পথ-শিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ঢাকার হিসেব অবশ্য তাদের কাছে নেই। পথশিশুরা কোনও না কোনও মাদকে আসক্ত। নিকুঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা সাংবাদিক ও সামাজিক কর্মী জাহিদ ইকবাল এ প্রতিবেদককে বলেন, অভিজাত উত্তরা- নিকুঞ্জ-২, এলাকা একসময় শান্তিপূর্ণ, পরিপাটি ও নিরাপদ আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে রাস্তাঘাটে ও ফুটপাতে বসে পথশিশুরা হাতে পলিথিনে ‘ড্যান্ডি গাম’ নিয়ে প্রকাশ্যেই নেশা করছে। সমাজকর্মী, স্থানীয় সচেতন মহল ও সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সংকট মোকাবেলায় তিনটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে। যেমন- ড্যান্ডি গাম বিক্রিতে লাইসেন্স ও সরকারি নিয়ন্ত্রণ চালু করা। নেশাগ্রস্ত শিশুদের পুনর্বাসন, কাউন্সেলিং ও শিক্ষামূলক কর্মসূচি চালু করা, প্রশাসন, এনজিও ও স্থানীয় কমিউনিটির যৌথ সচেতনতা অভিযান। ড্যান্ডিনেশা বন্ধে এখনই দরকার কার্যকর ও মানবিক উদ্যোগ—কারণ, এই শিশুরা সহানুভূতি নয়, চায় একটি নিরাপদ, আলোকিত ভবিষ্যৎ। বিশেষজ্ঞরা বলছে—এখনই ড্যান্ডিখোর ও ড্যান্ডিনেশা নিয়ন্ত্রণ না আনলে এটি আগামীতে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়বে। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ। সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। দেশে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় মাদকের নাম ইয়াবা ট্যাবলেট। এটি ছাড়াও রয়েছে - দেশিও বিদেশি মদ, বিয়ার, ফেনসিডিল, গাঁজা, এলএসডি ও ঘুমের ওষুধ অন্যতম।
ডিএমপি'র খিলক্ষেত থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ড্যান্ডিখোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আইনগতভাবে তাদের গ্রেপ্তার করা যায় না। তারা শিশু সংশোধনাগারের পরামর্শ দিলেও, সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় কোনো কার্যকর ফল মিলছে না। ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন শিশু যুক্ত হচ্ছে এ অন্ধকারের জগতে। এ সংঘবদ্ধ চক্রের কেউ কেউ ড্যান্ডি, গাঁজা, ইয়াবাসহ নেশাজাতীয়দ্রব্য সেবন করে রাস্তায় ঘুমায়। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ডিএমপি'র উত্তরা বিভাগের পুলিশের একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, মাঝেমধ্যে পুলিশ মাদক বিক্রেতা, মাদকসেবি, ড্যান্ডি আসক্ত এবং ছিনতাইকারীদের ধরতে রাস্তায় অভিযান চালায়। এটি অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সমাজে ঝড়ে পরাশিশু, পথশিশুদের নেশার জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে এখনই সর্বোপরি কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। তাই বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মহল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন এনজিও সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি এবং এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন উত্তরা ও খিলক্ষেত এলাকাবাসী।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর