• ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কেন রিজার্ভে হাজার-হাজার টন স্বর্ণ রাখে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কেন রিজার্ভে হাজার-হাজার টন স্বর্ণ রাখে?
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি স্বর্ণও রিজার্ভ হিসেবে সংরক্ষণ করে। ঐতিহাসিকভাবে, রিজার্ভ মূলত স্বর্ণ দিয়েই গঠিত হতো এবং কোনো দেশের মুদ্রার মান নির্ভর করত সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণভাণ্ডারের ওপর। শিল্প বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর রিজার্ভে অন্যান্য দেশের মুদ্রা ও বন্ড যুক্ত হলেও এখনো প্রতিটি দেশ তাদের রিজার্ভের একটি অংশ স্বর্ণ হিসেবে রাখে। মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপিমরগ্যানের তথ্যমতে, অনেক দেশ বৈদেশিক রিজার্ভ ডলারে না রেখে স্বর্ণে রূপান্তর করছে, যার ফলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। ২০২৪ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মোট রিজার্ভে ছিল ৩৬,২০০ টন স্বর্ণ, যা তাদের মোট সম্পদের ২০ শতাংশ। অথচ ২০২৩ সালে এ হার ছিল ১৫ শতাংশ। চীন, তুরস্ক, ভারত, ইরাক ও আজারবাইজান ২০২৪ সালে ২০ টনেরও বেশি স্বর্ণ কিনেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের দুর্বলতা, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার হ্রাস, বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি দেশগুলোকে স্বর্ণে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। কারণ স্বর্ণের মূল্য মুদ্রা বা বন্ডের মতো হঠাৎ কমে যায় না। জেপিমরগ্যান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আরও ৯০০ টন স্বর্ণ কিনতে পারে।

কোন দেশের কত স্বর্ণ আছে?
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি ৮,১৩৩ টন স্বর্ণ রয়েছে, যা তাদের মোট বৈদেশিক সম্পদের ৭৮ শতাংশ। আইএমএফ-এর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির হাতে রয়েছে ১৬,৪০০ টন স্বর্ণ, যা তাদের রিজার্ভের ৭০ শতাংশেরও বেশি। চীন ২,২৯৮ টন স্বর্ণের মালিক, যা তাদের বৈদেশিক সম্পদের ৬.৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তারা আরও ১৯ টন স্বর্ণ কিনেছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র কোনো স্বর্ণ কেনেনি। চীন ছাড়াও পোল্যান্ড ও তুরস্কও স্বর্ণ কিনছে। বাংলাদেশের রিজার্ভে আছে ১৪.৮ টন স্বর্ণ, যার মূল্য দেড়শো কোটি টাকার বেশি এবং এটি মোট রিজার্ভের ৫.৬৫ শতাংশ। ভারতের রিজার্ভে রয়েছে ৮৮০ টন স্বর্ণ (মূল্য ৯,৩০০ কোটি ডলার), যা তাদের বৈদেশিক রিজার্ভের ১৩ শতাংশ। পাকিস্তানের রিজার্ভে রয়েছে ৬.৪ টন স্বর্ণ, যার মূল্য প্রায় ৭০০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন যুদ্ধের কারণে কি স্বর্ণের দাম বেড়েছে?
অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর কিছুটা কমেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধই স্বর্ণের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। পণ্য বিশেষজ্ঞ শামস-উল-ইসলাম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ঘোষণার পর চীন স্বর্ণ কেনে এবং পরে দাম আউন্সপ্রতি ৪,৩৮০ ডলারে পৌঁছালে তা বিক্রি করে মুনাফা করে। বিশ্লেষক আহসান মেহান্তি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদিত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে ঝুঁকেছে। ট্রাম্পের এশিয়া সফর ও চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা দাম কিছুটা কমিয়েছে। শামস-উল-ইসলাম মনে করেন, চীন ও তার মিত্র ব্রিকস দেশগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য কমাতে কৌশলগতভাবে স্বর্ণ ব্যবহার করছে। মার্কিন শুল্কনীতি যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে ভারতসহ বহু দেশ তাদের মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে স্বর্ণ কেনার পথে হাঁটছে।