• ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে আন্তর্জাতিক কৌতূহল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১৫:২৫ অপরাহ্ণ
ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে আন্তর্জাতিক কৌতূহল
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে, সে উষ্ণতা এতটাই ছিল যে সেটি সময়ের স্রোতেও হালকা হয়নি।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রত্যক্ষ সহায়তা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মঞ্চ তৈরি করে দিয়ে, দুই দেশের মধ্যে একটি স্মরণীয় প্রতিশ্রুতি ও ঐতিহাসিক বন্ধন তৈরি হয়েছিল, যা দশকের পর দশক ধরেই ‘নিরপেক্ষ প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে।

ভারত সরকার সেই অধ্যায় থেকে সর্বদা ‘বাংলাদেশের পাশে’ থাকার কথা বলে আসলেও গত ১৫ বছরে একটি জনগণের মনে হাওয়া তৈরি হয়েছে যে ভারত আসলে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের—আওয়ামী লীগের—কাছেই বেশি হয়েছিল।

গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর এই ধারণা আরও শক্ত হয়েছে—ভারতের ভিসা কার্যকরভাবে চিকিৎসা জাতীয় জরুরি ছাড়া প্রায় বন্ধ ছিল, প্রতিটি সাধারণ ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক ভিসা বন্ধ গিয়ে প্রায় ‘দরজা বন্ধের’ বার্তা দিচ্ছিল।

সীমান্তে বিভিন্ন দফায় স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল, ১১ আগস্ট ২০২৫-এ জুট-পণ্যের ওপর এক ওয়ারে বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা শিল্প-ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতি তো বটেই, জনগণের মনস্তত্ত্বেও ‘ভারত অনেকটা দূরে সরছে’ এই অনুভূতি তৈরি করেছিল।

আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের দৃষ্টি এ প্রেক্ষাপে অনেকটাই এই ইস্যুতে ধরা পড়ে থাকে। সিঙ্গাপুরের ISAS-এর এক আলোচনায় বলা হয়েছে, ‘পোস্ট-হাসিনা’ বাস্তবতায় ভারতকে একটি পার্টি-নিরপেক্ষ, প্রাতিষ্ঠানিক পুনঃসংযোগ করার সুযোগ রয়েছে, যা না হলে ধীরে ধীরে ‘কে কার সঙ্গে’-এর রাজনৈতিক বিভাজন জনগণের মাঝে আরও প্রবল হবে।

ওআরএফের হর্ষ ভি. পন্ত মন্তব্য করেন, ভারতের প্রভাব কমে গেছে, এবং সম্পর্ক রিসেট করতে হলে ‘স্টেট-টু-স্টেট’ যোগাযোগ গড়ে তোলার প্রয়োজন।

দিল্লিভিত্তিক কৌশল-বিশ্লেষক সি. রাজা মোহন স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় যাচ্ছে, যেখানে দিল্লিকে শুধু কোনো এক দলের সঙ্গে নয়, দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

অন্যদিকে, নিরপেক্ষ কিছু বিশ্লেষক বলেছেন যে উপমহাদেশীয় চ্যালেঞ্জ—চীন-সুডানে চোরাচালান রুট, মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা, এবং দক্ষিণ এশিয়ার কানেক্টিভিটি—এই সব ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে বেঁধে রাখে।

দ্য ডিপ্লোমেটের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, “ঢাকা পাকিস্তান-যোগ বাড়ালেও ভারতের জন্য ক্ষতি ধরে নেওয়া হবে ভুল, কারণ ভূ-অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও পারস্পরিক লাভ দুনিয়াকে ভিন্ন কথা বলায় বাধ্য করে।”

CSEP-এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি (রেল–বন্দর–জলপথ) চালু করলে MSME-কৃষি-লজিস্টিকস খাতে সরাসরি আর্থিক ও সামাজিক লাভ অনেক গুণ বাড়তে পারে, যা ‘রাষ্ট্র–রাষ্ট্র’ বিনিয়োগের ভিত্তি গড়ে।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, জনমনে ‘ভারত- আওয়ামী লীগ’ সমার্থক ধারণার শেকড় রয়েছে, কারণ বছরের পর বছর নীতি-এখানে ব্যক্তিনির্ভর হওয়ায় সম্পর্কের সাধারণ মানুষ-স্তরে বিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের পরামর্শ স্পষ্ট: ভারতের যদি দ্রুত ভিসা সহজতর করে, সীমান্তে পণ্য পরিবহন বাধা কমায়, টিস্তা-গঙ্গা পানিচুক্তিতে বাস্তব রোডম্যাপ জারি করে এবং সীমান্ত নিরাপত্তায় যৌথ উদ্যোগ নেয় এবং সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘স্টেট-টু-স্টেট’ আস্থা গড়তে পারে — তাহলে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব আবারও জনমনের আস্থায় রূপ নিতে পারে।