বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব জয়নাল আবেদিন, সেনাবাহিনী গেজেট নং ৮৮৮৮; তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদান করেছেন, তাঁর অসীম সাহসিকতা ও নৃশংস আত্মত্যাগের জন্য রাষ্ট্র তাঁকে সম্মানসূচক পদকে ভূষিত করেছে
পদকসমূহ এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
রণ তারকা পদকঃ যুদ্ধক্ষেত্রে অসাধারণ সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের স্বীকৃতি।
সমর তারকা পদকঃ সমর অভিযানে দক্ষ নেতৃত্ব ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি।
জয় পদকঃ ১৯৭১ সালের বিজয়ের স্মারক,
মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ অবদানের চিহ্ন।
সংবিধান পদকঃ স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময়কালীন অবদান ও সংগ্রামের স্বীকৃতি।
ভৈরব যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
ভৈরব ছিল ১৯৭১ সালের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ একটি চক্রবিন্দু; ভৈরব রেল সেতু ও বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রধান যোগাযোগপথে সরাসরি প্রভাব ফেলত, মুক্তিযোদ্ধারা এখানে সেতু-বিধ্বংস, রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং পরিকল্পিত আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের কৌশলগত এগিয়ে চলাকে ব্যাহত করে, আমার বাবা সরাসরি এসব অভিযানে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদান করেছেন; তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে পাকবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও পার্শবর্তী অঞ্চলে দখল বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়।
সেক্টর-৩ এর ভৌগলিক ও সামরিক বিবরণঃ
সেক্টর-৩-এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল হেজামারা, সেক্টরের অধিবিভাগে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের আংশিক এলাকা,
সেক্টরের প্রথম কমান্ডার ছিলেন মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ, পরবর্তীতে দায়িত্ব নেন মেজর এ. এন. এম. নুরুজ্জামান; এই সেক্টরে বহু উপ-সেক্টর ও গেরিলা ঘাঁটি ছিল, তাদের প্রধান কাজ ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা, সেতু ধ্বংস করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ-প্রতিরোধ সমন্বয় করা।
পাঁচবটি উপ-সেক্টর, ক্যাপ্টেন নাসিম এবং আমার বাবা ছিলেন সহযোদ্ধা সম্পর্ক
সেক্টর-৩-এর গুরুত্বপূর্ণ উপ-সেক্টরগুলোর মধ্যে ছিলেন পাঁচবটি; এই উপ-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন এ. টি. এম. নাসিম, তিনি যুদ্ধকালে যোদ্ধা হিসেবে আহত ও বীরত্ববোধ প্রদর্শন করেছিলেন; পরবর্তীতে উনি পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত; ক্যাপ্টেন নাসিমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোদ্ধা ছিলেন আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন; তাদের সম্মিলিত নেতৃত্ব ও সমন্বিত অভিযানগুলোর ফলে পাঁচবটি উপ-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়।
আধুনিক সেনাবাহিনী, ভৈরব যুদ্ধ নিয়ে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্বঃ
বর্তমান আধুনিক সেনাবাহিনী ভৈরব যুদ্ধের অপারেশনাল সিদ্ধান্ত, গেরিলা কৌশল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং স্থানীয় চিন্হিত কৌশলসমূহ ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন ও অনুশীলন করে; ভৈরবের ঘটনার নথি ও সেক্টর-৩-এর অভিযানগুলোকে সামরিক প্রশিক্ষণ সামগ্রী হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তাদের doctrinal প্রশিক্ষণ পুস্তকে এবং কুখ্যাত অপারেশনাল কেসস্টাডিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়; এই গবেষণা শিক্ষণশীল দলিল হিসেবে কাজ করে, প্রশিক্ষণার্থীদের মানসিকতা ও সাহস গঠনে অনুপ্রাণিত করে; ভৈরব যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশলের সঙ্গে মিলিয়ে অপারেশনাল প্রস্তুতি, রণনীতি উন্নয়ন এবং সামরিক নেতৃত্বের প্রশিক্ষণে মূল্যবান ভূমিকা রাখে।
তাঁর সন্তান সার্জেন্ট (অবঃ) মনিরুজ্জামান মিয়াজী বলেন,আমার বাবার এই বীরত্ব কেবল আমাদের পরিবারের গর্ব নয়, এটি জাতির এক অমূল্য ঐতিহ্য, যাঁদের কাছে আমার বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্য, দলিল বা ছবি আছে, অনুগ্রহ করে শেয়ার করুন; আমি সেইসব দলিল সংগ্রহ করে ইতিহাস সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে চাই। এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এক রক্তস্নাত ইতিহাস এটা মুছে দিলে বাংলাদেশ মুছে যাবে।
মহান স্বাধীনতার স্থপতি সহ সকল মুক্তিযোদ্ধের সংগঠন, বীরমুক্তিযোদ্ধা, ৩০ লক্ষ শহীদ, ২লক্ষ মা -বোনের সম্ব্রমের বিনিময়ে এ স্বাধীনতার জন্য যাদের আত্বত্যাগে এই সোনার বাংলাদেশ ও পতাকা পেয়েছি তাদের প্রতি রইলো সশ্রদ্ধ সালাম। ও বিনম্র শ্রদ্ধা।