ঢাকার উত্তরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস শিকদার দৈনিক ভোরের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার বলেন, যুগ উপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি,কোয়ালিটি টিচার ও কোয়ালিটি এনভারমেন্ট প্রয়োজন আমাদের দেশে দুটোতেই ঘাটতি আছে, এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে,পুরনো পদ্ধতির অসম সিস্টেমে মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের শিক্ষা ব্যবস্থার পদ্ধতি থেকে আমাদের ধারণা নিতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থায় সকল ক্ষেত্রে ফ্রেন্ডলি ও ফ্রি এক্সপ্রেস থাকতে হবে, এডুকেশন লিডারশিপ তৈরি করতে হবে, যেগুলো সাধারণত বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত। কিন্তু আমাদের দেশে বৈদেশিক শিক্ষাব্যবস্থা অনেক পদ্ধতিই নেই। তিনি আরো বলেন, আমি উত্তরা সরকারি কলেজে সদ্য যোগদান করেছি।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি,তার মধ্যে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়ন উল্লেখযোগ্য। যেমন: বিষয় সম্পর্কিত উপস্থাপন ও কৌশল, ক্লাস নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, পাঠদানে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন ও রেফারেন্স ব্যবহার, সময়ানুবর্তিতা এবং সঠিক সময় শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
এছাড়া পাঁচ জন শিক্ষকদের সমন্বয়ে সরেজমিনে একটি সারভিলেন্স টিম প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন, যাহা আমি প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। অধ্যক্ষ ডঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস শিকদার বলেন, উত্তরা সরকারি কলেজ রাজনৈতিক মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি ।
এই কলেজের সবগুলো ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা রয়েছে এবং এখানে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হয়।
অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিগন এ ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও তা আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখন নিরিবিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত মনোরম পরিবেশে পাঠদানে মনোযোগী হতে পারবেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ উপস্থিতির মাধ্যমে তিন জনকে পুরস্কৃত করা হবে। এখানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক ক্লাব,রেড ক্রিসেন্ট, রোটারি স্কাউট, বিএনসিসি,ডিবেটিং ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব ও ফটোগ্রাফি ক্লাবের কার্যক্রম নিয়মিত অব্যাহত।
অধ্যক্ষ বলেন, খেলাধুলার মধ্যে আন্ত কলেজ প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটিক্স ছেলেদের বিভাগ ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম স্থান অর্জন করেছে, মেয়েদের বিভাগ ১৪ -১৫ শিক্ষাবর্ষ দলগতভাবে রানার্সআপ হয়েছে, ব্যাডমিন্টন ১৪ -১৫ শিক্ষাবর্ষে ছেলেদের বিভাগ দলগতভাবে রানার্সআপ হয়েছে, ব্যাডমিন্টন ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে দলগতভাবে প্রথম হয়েছেন। এছাড়াও অত্র কলেজের পাঠদান সমাপ্তির পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে সন্তোষজনক সাফল্য রয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্র কলেজের শিক্ষার্থীদের সাফল্য বেশ উল্লেখযোগ্য। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডি ইউনিট (বাণিজ্য )- ১ম হয়েছে অত্র কলেজের ছাত্র মো:ইমন হোসেন।
বিভিন্ন দেশী বিদেশি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অত্র কলেজের মানবিক বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, জাতিসংঘ আয়োজিত Photography for humanity প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট,উইনেস্কো আয়োজিত WasteAID প্রতিযোগিতায় রানারাপ,Wisden Photograph of the Year 2024 এর এম্যাচার ক্যাটাগরিতে রানার্সআপ, সময় টেলিভিশন আয়োজিত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন সহ অসংখ্য দেশী বিদেশি পুরস্কার পেয়েছে।
ফিল্ম মেকিং এ মানবিক বিভাগের সাব্বির আহমেদ সোহাগ বুসান চলচিত্র ,গ্রামীণফোন এবং প্রথম আলো পুরস্কার সহ অসংখ্য দেশী বিদেশি পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত অলিম্পিয়াডে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন সহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে।'
এভাবে উত্তরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের অসংখ্য সাফল্য অর্জনের কৃতিত্ব রয়েছে। যাহা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী। অন্যদিকে অত্র এলাকাটি একটি জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সেক্ষেত্রে একটি মাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অতএব শিক্ষার মান উন্নয়ন ও এর প্রসার ঘটাতে হলে উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রী ও অনার্স কোর্সগুলো চালু করা একান্ত প্রয়োজন বলে অত্র এলাকার বাসীর দাবি,যাহা আমি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি।২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তরা সরকারি কলেজে ৫৮ জন শিক্ষক রয়েছেন যারা প্রত্যেকেই বিসিএস এডুকেশন ক্যাডারের সদস্য।
পূর্বের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের নামকরণ পরিবর্তন করে উত্তরা সরকারি কলেজ নামে রূপান্তরিত হোক করা হয়েছে। গত ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের পাসের হার ৯৮.৩৮ জন শিক্ষার্থী। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বৃন্দ।
সরেজমিনে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেছেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা পাঠদান করেন অথচ বিরতি সময়ের টিফিন ব্যবস্থার জন্য একটি ক্যান্টিন নেই, যাহা একটি শঙ্কার বিষয়। এই ক্যান্টিন টি চালু করলে উল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবেন বলে অভিভাবক বৃন্দ দাবি করেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে বিবেচনা করবেন বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এম.জি.আর.নাছির মজুমদার, সম্পাদক : এস এম রফিকুল ইসলাম, যোগাযোগ ঠিকানা: সেঞ্চুরি সেন্টার: খ-২২৫, প্রগতি সরণি, মেরুল,বাড্ডা, ঢাকা-১২১২।, ফোন নং : +৮৮-০২-৫৫০৫৫০৪৭ | মোবাইল নং: ০১৭১৬৩৭১২৮৬
www: dailybhor.com
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোর