ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রিজন ভ্যানে আনা হয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নাকে। ভ্যানটি হাজতখানার দিকে যায়।
দেড় ঘণ্টা পর তাঁরা হাজতখানা থেকে বের হন। লতিফ সিদ্দিকীর মাথায় পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তাঁর দুই হাত পেছনে ছিল, তবে হাতকড়া পরানো ছিল না। হাফিজুর রহমানের বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় পুলিশের হেলমেট। ডান হাতে হাতকড়া, বাঁ হাতে বাংলাদেশ সংবিধান। এ সময় হাফিজুর রহমান সংবিধান উঁচু করে ধরে রাখেন। পরে তাঁরা আসামির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।
আদালতের প্রতি আস্থা নেই, বললেন লতিফ সিদ্দিকী
একজন আইনজীবী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে এগিয়ে যান। তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে চান। লতিফ সিদ্দিকী জানান, আদালতের প্রতি তাঁর কোনো আস্থা নেই। এজন্য তিনি কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেবেন না। আইনজীবী জানতে চান, তিনি নিজে আদালতে কোনো বক্তব্য দেবেন কি না। লতিফ সিদ্দিকী জানিয়ে দেন, তিনি আদালতের কাছে কোনো বক্তব্য দেবেন না।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে এজলাসে আসেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক হাসান লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তৌফিক বলেন, “ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কিছু লোককে ঘেরাও করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বলে স্লোগান দিচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে মঞ্চ ৭১ নামের সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে।”
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ও অন্যান্যরা বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন। তাঁরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী এবং মঞ্চ-৭১-এর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছেন।
হাফিজুর রহমানের বক্তব্য: সন্ত্রাসী হামলা ও আইনগত অসুবিধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান আদালতের অনুমতিতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি সংবিধানের অধিকার পাচ্ছি না। গ্রেপ্তারের কোনো কারণ জানানো হয়নি। আমি কোনো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শও পাইনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে আলোচনার জন্য মঞ্চ-৭১ আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেখানে অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার কথা ছিল। আমাদের ওপর একদল সন্ত্রাসী হামলা করেছে, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার না করে আমাদের গ্রেপ্তার করেছে।”
সাংবাদিক মনজুরুল আলমের বক্তব্য
সাংবাদিক মনজুরুল আলম বলেন, “আমরা সরকারের পতনের ষড়যন্ত্র করিনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলার জন্য গিয়েছিলাম। সাংবাদিকের হাতে কেন হাতকড়া? আমরা কি সন্ত্রাসী?”
তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, “আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের উপর হামলা করা হয়েছে। পুলিশ নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে। এটি বিচারিক হয়রানি। আসামিদের জামিন দেওয়া হোক।”
আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এসময় আসামিদের মাথায় হেলমেট ও এক হাতে হাতকড়া পরানো হয়। পরে হাজতখানার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
লিড নিউজ হিসেবে এ প্রতিবেদন উপযুক্ত।
ভোর/রিপন/আইটি