• ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১২ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১৮:০২ অপরাহ্ণ
১২ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

গত একযুগে (২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, এই তথ্য তারা কেবল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে। তাদের দাবি, দেশের হাসপাতালগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি।

সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে বেহিসেবি লুটপাট, বেপরোয়া চাঁদাবাজি, সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা না গড়ে একের পর এক নতুন সড়ক নির্মাণের কারণে এখন ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত সড়কনির্ভর হয়ে পড়েছে, ফলে দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি সরকারের দুর্নীতি ও ভুলনীতিকেই সড়কে গণহত্যার জন্য দায়ী করেন।

আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, গত এক যুগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পরিবহন খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, মালিক-শ্রমিক চাঁদাবাজি, কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার নৈরাজ্য, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল, লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, সড়কের ত্রুটি, বেপরোয়া গতি, চালকের মাদকাসক্তি ও অযোগ্য চালকের হাতে যানবাহন তুলে দেওয়ার কারণেই এই বিপুল হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর নৌ ও রেলপথকে উপেক্ষা করে সড়ক সম্প্রসারণ ও সড়কনির্ভর পরিবহন ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ায় ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। পথচারীদের হাঁটার উপযুক্ত অবকাঠামো তৈরি করা হয়নি, ম্যাস ট্রানজিট ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। ফলে গণপরিবহনের অভাবে যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, নসিমন-করিমন ও স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বাস নেটওয়ার্ককে ভেঙে দিয়েছে এবং দুর্ঘটনা বাড়িয়েছে।

সংগঠনটি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ১২ দফা সুপারিশ দিয়েছে:
১. নৌ, রেল ও সড়কপথকে সমন্বিত করে যাতায়াত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
২. পরিবহন খাতে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও মালিক-শ্রমিক দৌরাত্ম্য বন্ধ করে সংস্কার আনতে হবে।
৩. প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে পাতাল মেট্রোরেল চালু করতে হবে।
৪. ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লেন চালু করতে হবে।
৫. জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে মানসম্পন্ন বাস সার্ভিস ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
৬. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার আমদানি ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৭. রাষ্ট্রীয় খরচে চালকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।
৮. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করে ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি স্থাপন করতে হবে।
৯. সড়ক দুর্ঘটনা মামলা সরকারি উদ্যোগে আমলে নিয়ে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
১০. পরিবহন সেক্টরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১১. সড়ক খাতে আইনের শাসন ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
১২. পথচারী ও সাইক্লিস্টদের জন্য নিরাপদ লেন ও ফুটপাত তৈরি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিটার সভাপতি আবদুল হক এবং ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।