২০২৪ সালের এই দিনটি ছিল শুক্রবার। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশজুড়ে ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সিদ্ধান্ত হয়, আরো কঠোরভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
আজ ১২ জুলাই শনিবার। ২০২৪ সালের এইদিনটি ছিল শুক্রবার। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এদিনও দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত হয় আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার। নেতৃত্ব ও অংশীজনরা যখন কঠোরভাবে আন্দোলন চালানোর চিন্তা করছে, তখন কেউ পরামর্শ দেন বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানানো জরুরি।
এদিকে, আন্দোলন দমনে স্বৈরাচার হাসিনার দালাল ও সুবিধাভোগী প্রশাসন মরিয়া হয়ে ওঠে। তাদের চাপেই পুলিশ কঠোর অবস্থানের কথা প্রকাশ করে। এর সঙ্গেই ঘটে ১১ জুলাই, শুক্রবার রাতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ নিয়ে শাহবাগ থানায় মামলা—রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের চালক খলিলুর রহমান বাদী হন। মামলায় ‘অজ্ঞাত’ নাম উল্লেখ করা হয়।
একই দিনে কুমিল্লায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের হামলায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু কুমিল্লার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সফলভাবে দমনের চেষ্টার মোকাবিলা করে; এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১২ জুলাই থেকে কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে এই আত্মবিশ্বাস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ফ্যাসিবাদের পতন সুপ্রমাণ করে দেয়; পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের বিশ্বাস ও দেশের গণতন্ত্র পুনঃস্থাপনার চেতনা ফুটে ওঠে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুমিল্লার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ২৪’র জুলাই আন্দোলন প্রমাণ করে দেয়, অন্যায়ের অধীন ছাড়া কোনো শাসন টেকসই হতে পারে না।
ইতিহাসের সাক্ষ্য – ১২ জুলাই ২০২৪
এই দিনটি ছিল শুক্রবার, ছুটির দিন; তবু দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে মুখর হয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের পর শাহবাগে অবরোধ গাওয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেলপথ ব্লক করা ইত্যাদি। বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদের জড়ো হয়ে অবরোধ করার দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা যায়।
একদিকে, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় একটি ভিডিওগ্রাফি শিক্ষার্থীকে নির্যাতিত হয়। ছাত্রলীগ নেতারা তাকে একটি হলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
১১–১২ জুলাইঃ আন্দোলনের ছন্দ ও তীব্রতা
১১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটাবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। একই সময় কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে ছাত্রলীগের মিছিল ও সমাবেশ হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখে তারা।
পরদিন, ১২ জুলাই সারাদেশে মিছিলের ডাক দেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে মিছিল হয়। কিন্তু কলেজ মিছিলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়; ভিডিও ধারণ করায় ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র তামিম হোসেন নির্যাতিত হয়, পরে পুলিশ উদ্ধার করে।
ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রতিবাদ থেমে না থেমে ১৩ জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। একই দিনে কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা হলেও, সেখানে ছাত্রলীগ শান্তি সমাবেশ করে। ফলে আন্দোলনকারীরা পুলিশ লাইনে স্থানান্তরিত হয়।
সারাদেশে তরঙ্গ
-
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: বিকেলে ৪:৩০–৫:০০ এর মধ্যে কলাভবনের সামনে থেকে র্যালি শুরু করে বাহাদুর শাহ পার্ক ও কবি নজরুল কলেজ পাস করে ক্যাম্পাসে ফিরে সমাপ্ত হয়।
-
প্রায় ১৫ টি শহরে শিক্ষার্থীরা ঢাকার বাইরে আন্দোলনে অংশ নেয়। মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে মানবন্ধনে বাধার ঘটনা ঘটে।
-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: শুক্রবার বিকেলে রেলপথ অবরোধ করে স্টেশনবাজার সংলগ্ন ঢাকা–রাজশাহী রেললাইন বন্ধ রাখে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়।
-
চট্টগ্রাম: ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে মিছিল শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন জায়গা পেরিয়ে আলমাস মোড়ে শেষ হয়।
-
জাহাঙ্গীরনগর, সিলেট, রংপুর: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ। ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, নীলফামারী, বগুড়া, নোয়াখালী—প্রায় সবক’টি জেলা বিপুল উৎসাহ দেখে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘটনাচক্রে শিবির-শাসকবিরোধী শক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তিনি মনে করেন, ছাত্রছাত্রীরা যাতে আদালতের নির্দেশ মেনে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যায়, তার জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।
ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, আন্দোলনের চলমানতা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির প্রভাবে—এতে সাধারণ জনজীবন বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক পাটিগণিতের হাতিয়ার ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান মত প্রকাশ করেন, আদালতের আদেশ মেনে না চলা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ থাকবে, কারও অগ্রাধিকার থাকবে না।