• ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৭তম বিসিএসে বাতিলদের কী হবে কেউ জানে না!

চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১৮:০১ অপরাহ্ণ
২৭তম বিসিএসে বাতিলদের কী হবে কেউ জানে না!
সংবাদটি শেয়ার করুন....

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দেড় যুগ পর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন ২৭তম বিসিএসের সেই প্রার্থীরা, যাদের মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১ হাজার ১৩৭ জন প্রার্থীর নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। এ-সংক্রান্ত তিনটি আপিল আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেন।

রায়ের পর সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম জমা নেওয়া হয়েছে। সাময়িকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত ৩ হাজার ৫৬৬ জন প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা গত ১২ থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে ইতিমধ্যে যারা চাকরিতে আছেন, তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন— সিনিয়রিটি, পদোন্নতি ও ব্যাচ নির্ধারণ কীভাবে হবে তা নিয়ে। ২৭তম বিসিএসের কর্মরতরা জনপ্রশাসনে যোগাযোগ করেও এখনো কোনো সুস্পষ্ট উত্তর পাননি, ফলে উদ্বেগ ও প্রশ্নের শেষ নেই।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, সিনিয়রিটি রুলস বিদ্যমান আছে। তবে তাদের সিনিয়র স্কেল, পরীক্ষা ও ট্রেনিং বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে। এটি জটিল প্রক্রিয়া, তাই সরকারকে বিষয়টি সতর্কভাবে পরিচালনা করতে হবে। কোর্টের রায় কার্যকর হলে নিয়োগপত্র, যোগদান ও প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তখনই সামনে আসবে।

তথ্য অনুযায়ী, ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ, যা ২০১০ সালের ১১ জুলাই প্রকাশিত হয়। এরপর ২০২৪ সালে ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) করেন ১ হাজার ১৩৭ জন প্রার্থীর পক্ষে ১৪০ জন।

২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ১ জুলাই পিএসসি ফলাফল বাতিল করে এবং একই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা নেয়। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দ্বিতীয় ফলাফলে ৩ হাজার ২২৯ জন উত্তীর্ণ হন ও পরবর্তীতে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, দ্বিতীয় পরীক্ষায় অনেকেই উত্তীর্ণ হন যারা প্রথম পরীক্ষাতেও পাস করেছিলেন, আবার অনেকে বাদও পড়েন। বর্তমানে যারা চাকরিতে আছেন তাদের সেবার মেয়াদ প্রায় ১৭ বছর। এখন প্রথম পরীক্ষার রায় অনুযায়ী অনেকের ক্যাডার পরিবর্তন ও নতুনভাবে মেধা তালিকা প্রণয়ন প্রয়োজন হবে। তবে এতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে—কারণ আদালতের রায় অনুযায়ী প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাও নিয়োগ পাবেন, কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষার উত্তীর্ণরা বলছেন, “১৭ বছর রাষ্ট্রকে সেবা দেওয়ার পর এখন আমরা পিছিয়ে পড়ব কেন?”

এক প্রার্থী বলেন, “মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নিতে এসে দেখছি আমি পুলিশ ক্যাডারে যাচ্ছি। ৩০ বছর বয়সে ট্রেনিং নিতে পারতাম, এখন ৫০ বছর বয়সে ট্রেনিং করতে হলে মারা যাব।” প্রার্থীরা নিজেরাও জানেন না, তাদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে। একইভাবে ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা এন্ট্রি পজিশনে যোগ দেবেন নাকি বর্তমান পদবির সমপর্যায়ে— তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

অধিকাংশ কর্মকর্তার মতে, প্রশাসন ক্যাডারে এন্ট্রি পদ হলো সহকারী কমিশনার। কিন্তু এখন ওই ব্যাচের কর্মকর্তারা বহু আগেই উপসচিব হয়েছেন। প্রশ্ন হলো, নতুন করে যারা যোগ দেবেন তারা সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দেবেন, নাকি উপসচিব পদে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা— যেমন অজানাই রয়ে গেছে ২৭তম বিসিএসের বাতিলদের ভবিষ্যৎ।