• ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে স্থবির এলজিইডি ঢাকা জেলা,এডিপি টার্গেট পুরনে অনিশ্চিয়তা ! চলছে ত্রাসের রাজত্ব

অতিথি প্রতিবেদক অনক আলী হোসেন শাহেদী:
প্রকাশিত এপ্রিল ১০, ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ
উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে স্থবির এলজিইডি ঢাকা জেলা,এডিপি টার্গেট পুরনে অনিশ্চিয়তা ! চলছে ত্রাসের রাজত্ব
সংবাদটি শেয়ার করুন....

এলজিইডি ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: বাচ্চু মিয়ার অদক্ষতায় এলজিইডি ঢাকা জেলা ডুবতে বসেছে। ঢাকা জেলার সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দেখা দিয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) এর টার্গেট পুরনে অনিশ্চিয়তা। এলজিইডির সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন ঢাকা জেলায় ৫টি উপজেলা এবং রাজধানীতে অনেক গুরত্বপূর্ন উন্নয়ন কাজ চলমান। কাজ বাস্তবায়নে সিদ্ধান্তের অভাব এবং ঠিকাদারদেরকে নানা ধরনের হয়রানির কারনে সিংহভাগ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গুরত্বপূর্ন পল্লি সড়কে সেতু নির্মান প্রকল্পের আওতায় প্রত‍্যাশা, কাউন্দিয়া, মোল্লারহাট, নলাম, বান্দুরাসহ বড় বড় সেতু নির্মান কাজ দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ। মুখ থুবড়ে পড়েছে ঢাকা মহানগরীতে দৃষ্টিনন্দন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের কাজ। ভূমি অধিগ্রহনের কাজের অগ্রগতি না হওয়াতে ঝুলে আছে কেরানীগন্জ উপজেলায় ৩টি ৪ লেন সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ। পিপিআর অনুযায়ী যেখানে ২-৩ সপ্তাহের মধ‍্যে দরপত্র মূল‍্যয়ন করার কথা সেখানে তিনি ২-৩ মাসেও কোন দরপত্র মূল‍্যয়ন করতে পারেন না । দরপত্র মূল‍্যয়নের ক্ষেত্রেও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যোগ‍্য ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেন। দীর্ঘদিন দরপত্র মূল‍্যয়ন না করে ফেলে রাখার পর যে ঠিকাদার তার চাহিদামত টাকা দেয় তখন সেই ঠিকাদারকে তিনি কাজ দেন। এনিয়ে বেশ কয়েকবার ঠিকাদারদের সাথে তার তর্কবিতর্ক হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে,বেশকিছু প্রকল্পের দরপত্র দীর্ঘদিন যাবত মূল‍্যয়নের জন‍্য তার কাছে পড়ে রয়েছে। প্রকল্প পরিচলাকরা বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তিনি মূল‍্যয়ন করছেন না। ৬০ কোটি টাকার একটি কাজ সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন‍্য ঠিকাদারকে দেয়ার চেষ্টা করছেন শুনে ভূক্তভুগী ঠিকাদার হুমকি দিয়েছেন যে তাকে বাদ দিয়ে অন‍্যজনকে দিলে তিনি মামলা করবেন এবং দুদকে যাবেন। সবচেয়ে মজার ব‍্যাপার অত্রদপ্তরের সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী মোঃ ছাবের আলী দরপত্র মূল‍্যয়ন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী হওয়ার পরও তাকে দরপত্র মূল‍্যয়ন ধরতে দেয় না। তার ই-জিপি পাসওয়ার্ড নিয়ে বাচ্চু মিয়া তার নিজের লোককে দিয়ে মূল‍্যয়ন কাজ করায় যেন দরপত্র মূল‍্যয়নে বাচ্চু মিয়া তার ইচ্ছামত ঠিকাদারকে কাজ দিতে পারে।

বাচ্চু মিয়া সারা দিন অফিস করেন না। কখনও মাঠপর্যায়ের চলমান কাজ পরিদর্শন করেন না। তিনি সন্ধার পর অফিসে ঢোকেন। কিছু সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিসে থাকেন। সারাদিন তিনি মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন নেতাদের পিছনে ঘুরে বেড়ান। ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা জানান, তিনি এলজিইডির নিয়মিত কর্মচারী,কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করেন না। কিছু ভাড়া করা লোক দিয়ে অফিস চালান। তাদের মধ‍্যে তার সবচেয়ে প্রিয় এবং বিশ্বস্ত হচ্ছে মো: আনিস। বাচ্চু মিয়ার নিকট আত্নীয় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মো: আনিসের কথা ছাড়া তিনি কিছু করেন না। এলজিইডির কোন পদে না থেকেও তিনি এলজিইডি ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমের সামনে একটা রুম নিয়ে বসেন। যে কোন ফাইল নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে উপস্থাপনের আগে এই আনিসের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। তার চাহিদা পূর্ন হলে তিনি সাদা কাগজে “ওকে” লিখে স্বাক্ষর করলেই তবে বাচ্চু মিয়া সেই ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এই অনিস হচ্ছে তার যত অপকর্মের সাগরেদ। বিভিন্ন অযুহাতে ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে তা আবার টাকার বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ দেন। অফিসের সকল প্রকার কর্মচারী,কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের উপর এই ভাড়া করা আনিস খবরদারী চালায়। এই আনিসের ভয়ে অফিসে কোন কর্মচারী,কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার কোন কথা বলতে সাহস পায় না।

বাচ্চু মিয়া এলজিইডির কোন প্রকল্প পরিচালক বা উর্দ্ধত্বন কর্মকর্তার ফোন ধরেন না। প্রকল্প পরিচালকরা কাজের সমন্বয়ের জন‍্য ফোন করলে ফোন ধরেন না। এলজিইডির কয়েকজন প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলে এ তথ‍্য জানা যায়। প্রকল্প পরিচালকরা চিন্তিত যে বাচ্চু মিয়া জুনের মধ‍্যে এডিপির টাকা খরচ করতে না পারলে তারা নিজেরাও বিপদে পড়ে যাবেন, প্রকল্পের টাকা অব‍্যয়িত থেকে যাবে যা মন্ত্রনালয়ের কাছে তাদের কর্মদক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।

বাচ্চু মিয়া এলজিইডিতে একজন অতি ধুর্ত এবং প্রতারক কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত। গাজিপুর জেলায় জন্ম নেয়া এই কর্মকর্তার মা একসময় জাতীয় পার্টির নেত্রী ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি তখন জাতীয় পার্টি করতেন। এর পর তিনি বিএনপি করতেন। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি রাতারাতি আওয়ামীলীগের লোক বনে যান। আওয়ামীলীগ আমলে তিনি গাজিপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগন্জসহ গুরত্বপূর্ন জায়গায় চাকরী করেন। সর্বশেষ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মূখ‍্য সচিবের কন্ঠস্বর নকল করে তৎকালীন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে ফোন করে নেত্রকোনা জেলাতে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে ১৭-০২-২০২২ তারিখে পোষ্টিং নেন। পরবর্তীতে প্রধান প্রকৌশলীর সাথে মূখ‍্যসচিবের দেখা হলে আলাপচারীতায় মূখ‍্যসচিব জানান যে, তিনি বাচ্চু মিয়া নামের কাউকে চেনেন না এবং তিনি কখনো তার পোষ্টিং এর জন‍্য কোন ফোন করেন নাই। ফলশ্রুতিতে প্রতারনা করে সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কন্ঠ নকল করে পোষ্টিং নেয়ার অপরাধে বাচ্চু মিয়াকে ০৪-০৪-২০২২ তারিখে মাত্র ১.৫ মাসের মাথায় সদরদপ্তরে বদলি করেন প্রধান প্রকৌশলী। তিনি যেখানেই চাকরী করেছেন সেখানেই সহকর্মী বা অন‍্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী থাকাকালীন সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ক্ষমতার দাপটে বদলী পর্যন্ত করিয়েছিলেন এই বাচ্চু মিয়া। ময়মনসিংহ জেলায় সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর উপর আক্রমন করেছিলেন। কিশোরগন্জ জেলায় সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় উপজেলা প্রকৌশলীদের সাথে হাতাহাতি করেছেন। আর প্রতিবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এসব অপকর্ম থেকে পার পেয়েছেন। সর্বশেষ ৫ই আগষ্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে রাতারাতি দল পাল্টিয়ে বিএনপি বনে যান। বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ান যে বিএনপি করার করানে তাকে দেড় মাসের মাথায় বদলি করে ঢাকায় এনে ওএসডি করে রাখে এবং এই বলে ঢাকায় পোষ্টিং নেন। তাকে ঢাকাতে কখনো ওএসডি করে রাখা হয়েছিল না। নেত্রকোনা থেকে সদরদপ্তরে চলে আসার ২ মাসের মাথায় তাকে এলজিইডির গুরত্বপূর্ন অডিট ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে পদায়ন করা হয়। সর্বশেষ অডিট ইউনিট থেকেই ঢাকা জেলাতে পোষ্টিং করিয়ে নেন। এখন তিনি কোথাও বিএনপি, কোথায় জামাত-শিবির, কোথাও বৈষম‍্য বিরোধী আন্দোলনের লোক দাবী করেন। বারবার রং বদলানো এই বহুরুপী কর্মকর্তা এলজিইডি ঢাকা জেলাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এলজিইডির সর্বস্তরের কর্মচারী,কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারগন এই বাচ্চু মিয়ার ত্রাসের রাজত্ব থেকে মুক্তি চান।
এই ধুর্ত প্রকৌশলী ঈদের আগে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার নাম করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার চাঁদা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলজিইডিতে যেখানে মাস্টাররোল কর্মচারীদের নিয়োগ বন্ধ সেখানে বাচ্চু মিয়া পুরানো কর্মচারীদের বাদ দিয়ে প্রতি জনের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর অনুমতি ছাড়া ১১ জন কর্মচারীকে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

এলজিইডি ঢাকা জেলার সর্বস্তরের কর্মচারী,কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারগন এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়ার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এসব অভিযোগের ব‍্যাপারে বাচ্চু মিয়াকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নাই।