• ২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হত্যাচেষ্টা মামলায় কাঠগড়ায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, জামিন আদেশ ২২ মে

ঢাকা ডেস্ক
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২৫, ১৬:৩৮ অপরাহ্ণ
হত্যাচেষ্টা মামলায় কাঠগড়ায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, জামিন আদেশ ২২ মে
সংবাদটি শেয়ার করুন....

হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয় থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আনা হয়। তাঁকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়।

সকাল ১০টার পর নুসরাত ফারিয়াকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলার জন্য হাজতখানা থেকে বের করা হয়। তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। নারী পুলিশ সদস্যদের কড়া পাহারায় তিনি সিঁড়ি বেয়ে আদালতের দোতলায় উঠেন। কাঠগড়ায় তোলার পর একজন পুলিশ সদস্য তাঁর হেলমেট খুলে দেন। তখন সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিট।

আদালতে দাঁড়িয়ে নুসরাত ফারিয়াকে বিমর্ষ দেখা যায়। তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে কয়েক মিনিট স্থির দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে এক আইনজীবী তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ইশারায় কথা বলেন। বিচারক সারাহ ফারজানা হক এজলাসে প্রবেশ করার পর শুনানি শুরু হয়। ফারিয়া কাঠগড়ায় প্রায় ৩০ মিনিট রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তবে কোনো বক্তব্য দেননি।

ঘটনার সময় বিদেশে ছিলেন নুসরাত, দাবি আইনজীবীর

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর ভাটারা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি। চলতি বছরের ৩ মে ভুক্তভোগী এনামুল এই ঘটনায় ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন, যেখানে নুসরাত ফারিয়াকেও আসামি করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। শুনানিতে নুসরাতের আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান বলেন, “আমার মক্কেল একজন সুপরিচিত অভিনেত্রী। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছিলেন মাত্র।”

তিনি আরও জানান, মামলার ঘটনার সময়—২০২৩ সালের ১৯ জুলাই—নুসরাত ফারিয়া বিদেশে অবস্থান করছিলেন। তিনি তখন কানাডায় একটি পেশাগত কাজে ছিলেন এবং ১৪ আগস্ট দেশে ফেরেন। এ সংক্রান্ত পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

পিপির অভিযোগ: “ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী”

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “নুসরাত ফারিয়া নিঃসন্দেহে একজন অভিনেত্রী, তবে তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।”

পিপি আরও বলেন, “তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং বলেছেন, ‘প্রতিটি ঘরে শেখ হাসিনা আছেন।’ এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি শেখ হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। এমনকি সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হওয়ারও চেষ্টা করেছেন।”

এ সময় পিপি অভিযোগ করেন, “ফারিয়া শুধু সহযোগীই নন, তিনি অনলাইন জুয়ার অ্যাপসের শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করেছেন। এতে করে তিনি যুবসমাজকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের সময় যখন শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলনে ছিল, তখন কিছু শিল্পী ও অভিনেতা অনলাইনে গোষ্ঠী তৈরি করে আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। নুসরাত ফারিয়াও ছিলেন তাদের মধ্যে।”

শুনানি শেষে আদেশ ২২ মে

বিচারক সারাহ ফারজানা হক উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শুনে ২২ মে জামিনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার ঘোষণা দেন। শুনানি শেষে নুসরাত ফারিয়াকে আবার হাজতখানায় নেওয়া হয়।

আদালত চত্বরে মায়ের অপেক্ষা

মেয়ে নুসরাত ফারিয়াকে একনজর দেখতে সকাল ৮টায় ঢাকার আদালত চত্বরে পৌঁছান তাঁর মা ফেরদৌসী বেগম। প্রথমে হাজতখানার সামনে গেলেও গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় দেখে সরে যান এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে একটি কৃষ্ণচূড়ার নিচে অবস্থান নেন।

আদালতের ভিড় দেখে ফেরদৌসী বেগম আর সামনে এগোননি। শুনানি শেষ হলে তিনি আইনজীবীদের ফোন করে মেয়ের খোঁজ নেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তাকে visibly বিষণ্ন দেখা যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শুনানি শেষে নুসরাত ফারিয়াকে প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।