• ২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এ এফ মাশুক নাজিম

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত মে ৩১, ২০২৫, ১২:১০ অপরাহ্ণ
দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এ এফ মাশুক নাজিম
সংবাদটি শেয়ার করুন....

শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক এবং শেখ হাসিনা সহ হত্যা মামলার আসামি, আইন প্রকারী সংস্থা ও দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা জনগণের

বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এ এফ মাশুক নাজিম এখন শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। অথচ এই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির প্রত্যয়ন নিয়ে সংগঠনের চেয়ারম্যান পদে আসীন হওয়ার পূর্বে ছিলেন সম্পদহীন। মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি—যার বেশিরভাগই দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত বলে অভিযোগ উঠেছে।
জুলাই -আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ এফ মাশুক নাজিমের বিরুদ্ধে গত ২৭/১০/২০২৪ ইং তারিখে ঢাকা চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ( পল্টন আমলী) আদালতে মোঃ জালাল মিয়া বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেখানে সাবেক জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মাশুক নাজিম ৩৫ নং আসামি। ধারা ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি প্যানেল কোড ১৮৬০ । উল্লেখ্য এই মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, মাশুক নাজিম তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে সংগঠনের বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। চট্টগ্রাম নতুন ফিসারিঘাট ও মৎস্য মার্কেট থেকে দোকান বরাদ্দ দিয়ে প্রতিটি বরাদ্দের বিপরীতে ১০-১৫ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব অর্থ সংগঠনের কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজস্ব ও আত্মীয়স্বজনদের নামে রেখে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম ফিসারিঘাট এলাকার প্রায় ২৪৫টি দোকানের মধ্যে ১৫টি দোকান তিনি স্বজন ও বেনামি হিসেবে নিজের দখলে রেখেছেন। এরমধ্যে ১২টি দোকান বিক্রি করে প্রায় ২ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ইকবাল রোড, মান্ডা ও নতুন ফিসারিঘাট এলাকায় প্রায় শতাধিক দোকান ভাড়া থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে নিজের পকেটে পুরেছেন মাশুক নাজিম। এসব অনিয়ম তদন্ত করলে উঠে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা,অষ্টগ্রাম উপজেলার পৈত্রিক বাড়ি ও সম্পদ হিসেবেও বিস্ময়কর তথ্য মিলেছে। জানা যায়, নিজ গ্রামের বাড়িতে তিনি প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন একটি অতি-আধুনিক অট্টালিকা। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের বিলাসবহুল ভবন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নির্মাণ করেননি।
শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে অষ্টগ্রাম উপজেলা,কাস্তুল ইউনিয়নের ঝগই এলাকায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিশাল ইটভাটা স্থাপন করেন। অথচ বার্ষিক রাজস্ব দেখানো হয় মাত্র ৪.৬ লাখ টাকা, যেখানে বাস্তবে আয় ৯ লাখ টাকারও বেশি। ফলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির স্পষ্ট অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
রাজধানী ঢাকার বিলগাঁও এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও একটি আধুনিক ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর নামে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। গুলশান-২ এর আরেকটি ফ্ল্যাট কিনেছেন প্রায় ২ কোটি টাকায় ক্রয় করেন। বর্তমানে বাসা নং ১৩/ বি, রোড নং ১১৭ এতে গুলশান-২ ঢাকায় বসবাস করছেন। রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি—যার মধ্যে একটি ল্যান্ড ক্রুজারের মূল্য ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।তাঁর নামে পরিচালিত দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—মেসার্স তরী বিল্ডার্স ও মেসার্স চৌধুরী কর্পোরেশন—এর ব্যাংক লেনদেন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, একাউন্টে জমা হয়েছে ৩ কোটিরও বেশি টাকা। পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানদের নামে এবং বেনামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক হিসাব, যেখানে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে।
তাঁর একমাত্র ছেলে তাজবিন নাজিম বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন এবং সেখানে ইতোমধ্যেই ৫০ কোটিরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। মেয়েকে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ ও তদন্ত দাবি:এ এফ মাশুক নাজিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচার, পদ ব্যবহারে অনিয়ম, আত্মীয়স্বজনকে অবৈধ সুবিধা প্রদান এবং নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখনই রাষ্ট্রীয় তদন্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করে, তবে বেরিয়ে আসবে একটি ভয়ঙ্কর দুর্নীতির চিত্র।জনগণ এবং ভুক্তভোগীরা জোরালোভাবে দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা রক্ষায় এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি।
পুলিশের ভূমিকা:
খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ: আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার পক্ষ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ ইকবাল হোসেন সরদার কে প্রতিনিয়ত হয়রানির অভিযোগ।
বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এএফ মাসুক নাজিম এর বিরুদ্ধে লুটপাট, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয়নি। বরং তার দাপটে নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মীয় পরিচয়ে মাসুক নাজিম আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। অথচ এই লুটপাটের বিরুদ্ধে তদন্ত তো দূরের কথা, বরং যাঁরা এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছেন, তারাই পড়েছেন রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মুখে।একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, মাসুক নাজিম তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মিথ্যা সাধারণ ডায়েরি করেন। সেই ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তখনকার ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ইন্সপেক্টর মোঃ দাউদ হোসেন, যিনি বর্তমানে খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে কর্মরত।
ভুক্তভোগী জানান, “ওসি দাউদ হোসেন এবং তার সহকারী কমিশনার আমাকে মোবাইল ফোনে পরিবারের সম্মুখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন (মোবাইল স্পিকারে পরিবারের সবাই শোনেন এবং আতঙ্ক হয়ে পড়েন) এবং ঈদের দিন ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। এমনকি আমাদের ঈদের আনন্দ পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আমি তৎকালীন ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন এবং আমি সেই হয়রানি থেকে মুক্তি পাই।”
তিনি আরও বলেন, “একজন ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজ নেতার ইচ্ছায় একটি গোটা পুলিশ বাহিনী কীভাবে ব্যবহার করা যায়, আমি সেটার বাস্তব উদাহরণ। এখন সেই পুলিশ কর্মকর্তা আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
এই অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তারা বলছেন, প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে, সাধারণ মানুষ এমন হয়রানির শিকার হতেই থাকবে।
এদিকে খিলগাঁও থানার ওসি মোঃ দাউদ হোসেন এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য দেননি।