বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা, শাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং সরকারি খাতের জবাবদিহিতা বাড়াতে নতুন করে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শনিবার (২১ জুন) সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বর্তমান বিনিময় হারে (প্রতি ডলার ১২২.৩৭ টাকা ধরে) এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এই অর্থায়ন সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে, অর্থনৈতিক সংস্কার ত্বরান্বিত করতে এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, “বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারি অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন জরুরি। সরকার ইতোমধ্যে উন্মুক্ত ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গঠনে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঋণ সরকারের নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদারে সহায়তা করবে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির ভিত্তি গড়তে সহায়ক হবে।”
সংস্কারের মূল লক্ষ্য
বিশ্বব্যাংক জানায়, এই ঋণ কর্মসূচি বাংলাদেশের কর প্রশাসনকে আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং আধুনিক করে গড়ে তুলবে। এতে করে রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাড়বে, যা সরকারের মানসম্মত জনসেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। কর ছাড় ব্যবস্থাকে আরও পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিক করতে সমস্ত কর ছাড়ের জন্য সংসদীয় অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হবে।
এছাড়া, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্পূর্ণ সমাধানক্ষমতা প্রদান এবং আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকারি খাতের স্বচ্ছতা ও ডিজিটালাইজেশন
২০২৭ সালের মধ্যে সকল সরকারি প্রকল্প মূল্যায়ন নথি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি কেনাকাটায় ইলেকট্রনিক গভার্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বাধ্যতামূলক করা হবে এবং সুবিধাভোগী মালিকানা প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর স্বাধীনতা ও তথ্য স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি একটি সামাজিক রেজিস্ট্রি চালু করে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সহায়তা কার্যক্রম আরও কার্যকর করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, “এই অর্থায়ন সরকার ও জনগণের মধ্যে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তথ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং সঠিক সুবিধাভোগী চিহ্নিতকরণ সরকারি সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করবে।”
চলতি অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি বেড়ে ৩.০৭ বিলিয়ন ডলার
এই ঋণের মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে নতুন অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে মোট ৪৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত ও ছাড়মূলক ঋণ প্রদান করেছে।