রাজধানীর উত্তরখান বালুর মাঠ মিয়াবাড়ি তালতলা এলাকায় পূর্বশক্রতার জের ধরে সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে আপন চাচাতো ভাই ও বোনের স্বামীর বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা ও বানোয়াট ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই জেঠাতো ভাইয়ের স্ত্রী নাদিয়া আকতার মিনুর বিরুদ্ধে।
মামলার কারণে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মৃত মাসুদ মিয়ার ছেলে মোঃ রাব্বি মিয়া (৩৫) ও তার ছোট বোনের স্বামী আর্কিটেক্ট ইন্জিঃ জাকির হোসেন।
এ সময় ভুক্তভুগি জাকির হোসেন বলেন, জোর জবরদস্তি
তার শশুরবাড়ীর বসতভিটা দখলের উদ্দেশ্যে ভাংচুরের ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত ১২/০৩/২০২৫ইং তারিখ ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেছে তার শাশুড়ী রওশন আরা। অভিযোগের সুরাহা না করেই উত্তরখান থানা পুলিশ গত ৩/৬/২০২৫ইং তারিখ উল্টো রাব্বি ও তার বিরুদ্ধে বানোয়াট সাজানো মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা নিয়েছেন। ভুক্তভূগি জাকির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সম্পত্তি নিয়ে রাব্বির সাথে তাদের পারিবারিক বিরোধ থাকলে সেখানে আমার কি দোষ? আমি তাদের পরিবারের জামাই,থানা পুলিশ এই বিষয়টি জানার পর ও আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি এই মামলার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই এ ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা নিয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশ হয়রানি করতে পারে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী বলেন, ধর্ষণ ঘটনা বড়ই সেনসেটিভ, এধরণের মামলা গুলো বেশির ভাগই মিথ্যা ও সাজানো হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষের সম্মানহানী ও বিব্রত করা হয়। সেই সাথে হয়রানি করা হয়।
এ সব মামলায় পুলিশলকে আরো বেশি পেশাদারিত্ব দেখানো উচিত।
ধর্ষণ চেষ্টা মামলার এজাহারের নিয়ম জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে থানার ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ভুক্তভুগি জাকির হোসেন আরো বলেন, সে ঐ বাড়ির জামাই,তার সম্মান নষ্ট করতে বাদি পক্ষের সাথে আতাঁত করে কোন ধরনের তদন্ত ও মেডিকেল রিপোর্ট ছাড়াই তার বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক এ মামলা করা হয়েছে ।
মামলার সাথে সংযুক্ত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল উত্তরার মেডিকেল অফিসার ডা.এ এফ.এম মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরকৃত ১০টাকা মূল্যের চিকিৎসা পরামর্শ স্লিপে লেখা রয়েছে মামলার বাদিনিকে একজন গাইনি চিকিৎসক ও ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের স্মরনাপন্ন হতে বলা হয়েছে । মামলার বাদি মিনু এর কোনটারই সাপোর্ট না নিলেও ঘটনার হিস্ট্রি লেখা কাগজের উপর স্ব-প্রনোদিত হয়ে থানা পুলিশ
মামলা নিয়েছেন বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী জাকির হোসেন।
এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন এক জন দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসার কি ভাবে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিরসন না করে নিরীহ মানুষের নামে ধর্ষণের চেষ্টার মতো জঘন্য মামলা নিয়ে তাদেরকে হয়রানি করছে।
চিকিৎসা সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ড.এ.এফ.এম.মাহবুব হোসেন বলেন,তিনি রূগির কথা শুনে ঘটনার (হিস্ট্রি) লিখেছেন, তার শরীরে কোন ক্ষত আছে কিনা এমন কিছুও তিনি দেখেন নি। তিনি তাকে কোন ধরনের চিকিৎসা না দিয়ে গাইনি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে বলেছেন। রূগির সাথে কথা বলে তিনি তাকে গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ এবং ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চেকআপ করাতে এ্যাড ভাইস করেছেন।চিকিৎসা স্লিপে পুলিশ কেস সিল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে তিনি জানেন না।
ধর্ষণ চেষ্টা মামলা নথি ভুক্তি করতে কি ধরনের এভিডেন্স লাগে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সঠিক তদন্ত শেষে এজাহার নেওয়া উচিত। তবে ওসি চাইলে ডাক্তারী সার্টিফিকেট ও স্বাক্ষীদের স্টেটমেন্ট ছাড়াই মামলা নিতে পারে।
গত ০৩/০০৬/২০২৫ ইং তারিখের মামলা নং-২ ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আগে তদন্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউর রহমান বলেন,মামলা হয়েছে তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বলেন,ঘটনার রাতে তিনি উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউর রহমানের নিকট গিয়ে তাকে জানান, তার স্ত্রীর বড় ভাই রাব্বি বিষয়টি জানতে পেরেছেন তাদের পাশের ঘরে অবস্থানরত তাদেরই আত্মীয় স্বজন জমি জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলা দেওয়ার পায়তারা করছে।সেই সাথে তিনি ওসি জিয়াউর রহমানকে তার ঘরে অবস্থানরত ভিডিও ফুটেজ দিখিয়ে বলেন,তিনি ঘটনার ঐ সময় ৩ ঘন্টা যাবত তার রুমেই ছিলেন। আপনি প্রয়োজনে ভিডিও ফুটেজ চেক করতে পারেন। এর পর ও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে তার বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তিনি প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছেন,পাশাপাশি তিনি দূর্নিতীবাজ অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে ৫ই আগষ্ট ২০২৪ইং ফ্যসিস হাসিনা পালিয়ে গেলেও উত্তরখানে তার দোসররা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে।
অভিযোগ উঠেছে পুলিশের নাকের ডগায় আওয়ামী লীগের পদধারী ফ্যসিস দোসররা চলাচল করছে।কেউ কেউ আবার বলছেন
খুনি হাসিনার শাসনামলের মতোই কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ডে বদনাম হচ্ছে পুরো পুলিশ প্রশাসনের। তাদের এহেন রোষানলে পরে কোরবানি ঈদের আগের দিন থেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী রাব্বি ও জাকির হোসেন।
জানা যায়, উত্তরখান মধ্যপাড়া মিয়াবাড়ী তালতলা এলাকার ১০৯৯ নং বাড়ির পৈত্রিক সম্পত্তির বসতবাড়িতে বসবাস করছেন মৃত মাসুদ মিয়ার ছেলে রাব্বি ও তার ছোট বোনের স্বামী আর্কিটেক্ট ইন্জিঃ জাকির হোসেন। তাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে একের পর এক কুট কৌশল অবলম্বন করছেন মুক্তি বেগম,মামুন ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার মিনু,রত্না বেগম,সুমাইয়া আক্তারসহ তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। অনুসন্ধানে জানা যায়,তাদের সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় কয়েকজন ভুমি দস্যু দালাল ও আওয়ামী লীগের দোসর। এই সংঘবদ্ধ চক্রটির বিরুদ্ধে এলাকার অনেক মানুষের জায়গা জমি দখল করার অভিযোগ রয়েছে। তারা খুজে খুজে এলাকাতে ওয়ারিশ কেনা বেচা নিয়ে ব্যাস্ত। তাদের খপ্পরে পরে অনেক মানুষ জমি জমা হারিয়ে সর্বস্বান্ত।
এই চক্রটিই রাব্বি-র গুম হওয়া আপন ছোট ভাই রনির জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারাই মূলত এ কাজে ইন্দন দিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছে।
ভুক্তভুগি জাকির হোসেন আরো বলেন,এরি জের ধরে গত ৩রা জুন ২০২৫ ইং তারিখ সন্ধ্যা রাতে নাদিয়া আকতার মিনু,রত্না ও সুরাইয়া নিজেরা নিজেরা কামড়া কামড়ি করে নিজের কাপড় নিজে ছিড়ে আপন চাচাতো ভাই রাব্বি এবং তাকে ফাঁসাতে তাদের নামে থানায় সাজানো মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাব্বির কাছ থেকে তারই জেঠাতো ভাই মামুন কিছু টাকা দিয়ে জমি কিনেছে। ঐ জমি বুঝিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় তারা একে অপরের নামে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করছে। তাদের এই বিরোধ মেটাতে পারিবারিক ভাবে কয়েকবার বসলেও কোন সুরাহা হয়নি। তারা আরো বলেন,জাকির হোসেন হলো পরিবারের জামাই, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে জাকির হোসেনকে কেন মিথ্যা মামলায় জড়াতে হবে। তারা প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।