বানারীপাড়ায় তিন বিধবা নারীর জমি দখলে বিএনপি-আওয়ামী লীগে ঐক্য
বরিশালের বানারীপাড়ায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে তিন বিধবা নারীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, বিধবা নারীদের স্বজনদের ওপর হামলা করে উল্টো তাদেরকেই মামলায় ফাঁসিয়েছেন প্রভাবশালিরা। শুধু তাই নয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিএনপির অফিস নির্মাণের নামে জমি দখলের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। আর পুরো বিষয়টিতে বিএনপি এবং আ’লীগ নেতাদের সহযোগিতা করেছেন বানারীপাড়া থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী তিন বিধবা নারী। বেলা ১২টায় ক্লাবের হলরুমে ভুক্তভোগী মৃত শামছুল আলম খানের স্ত্রী নাদিরা আলম খান, তার ভাই মৃত নুরুল আলম খানের স্ত্রী শামীমা বেগম ও মৃত হিরু আলম খানের স্ত্রী রানু বেগম এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। তারা তিনজনেই বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর এলাকার স্টেশন-বোর্ড স্কুল সংলগ্নের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাদিরা আলম খান বলেন, আমি এবং আমার ভাইয়েরা মৃত্যুর পর তাদের স্ত্রীরা ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগ দখল করে আসছেন। ২০২৪ এর অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ করেই বানারীপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান লিটন আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদা না পেয়ে হঠাৎ করেই চলতি বছরের গত ১১ জুন বিকাল ৫টার দিকে আমিসহ আমার পরিবারের লোকেদের ওপর লাঠিসোটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা, মারধর ও বাসাবাড়ি ভাঙচুর করে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) জানালে তিনি ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানোর কথা বলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেখানে থানা পুলিশ আসেনি। বরং রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করেই পুলিশ এসে আমার দুই ভাইয়ের ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায়।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমাদের ওপর হামলা করে উল্টো নাটকিয়ভাবে নিজেরা নিজেদের মাথায় জখম ও ভাঙচুরের নাটক সাজিয়ে আমার ভাইয়ের মেয়ে ও ছেলেদের নামে থানায় মামলা নিয়েছেন ওসি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের বলেন, ‘আটক স্বজনদের কোর্ট থেকে জামিন করানোর পর তিনি প্রতিপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি মিট করে দিবেন।
নাদিরা আলম বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলেরা জেল হাজতে থাকায় আমিও তখন বরিশালে অবস্থান করি। সেই সুযোগে বানারীপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান লিটন মৃধা, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল মেম্বার, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বশির কাজী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা খান রেজাউল করিম ও বিএনপি কর্মী আব্দুস সালাম পুলিশসহ তাদের সহযোগিরা আমার সিএন্ডবি রাস্তার পাশে ১১৭, ৩৪৮ নম্বর খতিয়ান ও ৫৯৫,৫৯৬,৫৯৭,৫৯৮,৬০৯ নম্বর দাগের ৬৯ শতাংশ জমি দখল করতে কাঠের দোকান নির্মাণ করেন। আমি বাধা দিতে গেলে তারা জানায়, ওই জমিতে বিএনপির অফিস হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জমির অবৈধ দখল ঠেকাতে বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছি। আদালত ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাও মানছে না বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা আদালতের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের ভুমিদস্যু এবং সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ভুক্তভোগী বিধবা নারীরা। পাশাপাশি তাদের কবল থেকে সম্পত্তি উদ্ধারে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বানারীপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান লিটন বলেন, ৬৯ শতাংশের মধ্যে আমার মায়ের ৬২ শতাংশ জমি রয়েছে। আদালতের নির্দেশে ৬২ শতাংশ জমি আগে থেকেই আমার দখলে রয়েছে। এখানের জমি দখল বা আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার কোন ঘটনা ঘটেনি।
অপরদিকে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. জলিল মেম্বার বলেন, যেই জায়গায় দোকান তোলা হয়েছে তার পাশেই আমার জমি রয়েছে। দোকান উত্তোলনকারী ব্যক্তিরা আমাকে আমার জমি দেখিয়ে দিতে বলে। আমি তাদেরকে আমার মালিকানা জমি দেখিয়ে দিয়েছি। জমি দখলের বিষয় আমি কিছু জানি না। সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে।
এছাড়া জমি দখলে সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তফা বিএনপি নেতার পক্ষ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জমি নিয়ে মামলায় বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান লিটনের পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। পুলিশ উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছে। ওই নারী জমি দখল করতে না পেরে লিটনের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় সে মামলা করেছে, দু’জন গ্রেফতারও আছে। তবে অভিযোগকারী বিধবা নারীদের পরিবারের ওপর হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ না পাঠানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান ওসি।