আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যশোর ৮৫ শার্শা-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীতা ও জনগণের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে তুমুল আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—কে হবেন যোগ্য প্রার্থী, কেমন হবে ভবিষ্যতের সরকার?
দীর্ঘ দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামল নিয়ে জনগণের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একপক্ষে দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের অভিযোগ, অন্যপক্ষে উন্নয়ন। তাই নতুন সরকার কেমন হবে, অন্য দল ক্ষমতায় গেলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা—এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে গভীর পর্যবেক্ষণ।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও নির্বাচনী মাঠে তেমন কোনও প্রচারণা দেখা না যাওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আদৌ হবে কিনা।
স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে একাধিকবার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রার্থী জয়ী হন। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ এবং পরবর্তীতে সংসদ ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর বিজয়ী হন, যিনি সীমান্তের “লৌহ মানব” হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে শার্শার রাজনীতিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম আবুল হাসান জহির। দীর্ঘদিন মাঠে-ময়দানে থেকে দলের দুঃসময়ে কাজ করা এই নেতা দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশী হলেও জানিয়ে দিয়েছেন—দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকেই সমর্থন করবেন।
অপরদিকে, শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তরুণ নেতা নুরুজ্জামান লিটন তরুণ ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। আওয়ামী আমলে নাশকতার মামলায় কারাবরণ করলেও তার বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই, যা তাকে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছে।
দলের আরেক নেতা খায়রুজ্জামান মধু, দীর্ঘদিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। যদিও মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
এই আসনে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং গ্রহণযোগ্য মুখ হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে তিনি এলাকায় একজন পরিচ্ছন্ন, দখলমুক্ত ও চাঁদাবাজবিহীন রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত। শার্শার বিভিন্ন ইউনিয়নের সংক্ষিপ্ত জরিপেও তার জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে।
বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখানে রয়েছেন জামায়াত ইসলামী প্রার্থী আজিজুর রহমান। তিনি দলের একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় নিজের অবস্থানে বেশ আত্মবিশ্বাসী। দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে ধর্মপ্রাণ ভোটারদের বড় একটি অংশ তার পক্ষে যেতে পারে বলে স্থানীয় জামায়াত কর্মীরা আশা করছেন।
শার্শার সাধারণ ভোটাররা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা কারো পক্ষেই অন্ধভাবে অবস্থান নিচ্ছেন না। যিনি চাঁদাবাজ, দখলদার বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে, তাকেই বর্জন করবেন বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন এই আসনে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ আফিল উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগ, অর্থবল দিয়ে জোরপূর্বক নির্বাচিত হওয়ার অভিযোগ এবং প্রায় অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে থাকেন। এবার ভোটাররা চান পরিচ্ছন্ন, আদর্শবান এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবের কোনো প্রার্থীকে তাদের নেতা হিসেবে দেখতে।