• ২রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছেলের অবস্থা জানতে এসে বাবার চোখে জল, জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে জারিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত জুলাই ২৩, ২০২৫, ১৯:১৫ অপরাহ্ণ
ছেলের অবস্থা জানতে এসে বাবার চোখে জল, জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে জারিফ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বুধবার দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছুটে আসেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। আইসিইউ-এর সামনে ইতোমধ্যে চারজন স্বজন অপেক্ষায় ছিলেন। উদ্বিগ্ন হয়ে তারা জানতে চাইলেন, ‘জারিফ ফারহানের অবস্থা কী?’ ওই ব্যক্তির চোখ তখন ছলছল করছিল। কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারা বলেছেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা ছাড়া কিছু করার নেই। মানসিকভাবে যেকোনো ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ফুসফুসে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, সেই ক্ষত শুকানোর চিকিৎসা চলছে। এখনো নড়াচড়া করছে না। লাইফ সাপোর্টে আছে। তবে লাইফ সাপোর্ট সবসময় রোগীকে সুস্থ করবে এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে আল্লাহ চাইলে সবকিছু পরিবর্তিত হতে পারে।’

এই কথা বলার সময় গলা ভারী হয়ে আসে তার। চোখ মুছে নেওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট আনার কথা বলে তিনি সাততলায় চলে যান। স্বজনদের কাছে জানা যায়, ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমান। তার একমাত্র ছেলে জারিফ ফারহান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, যিনি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন। তিনি বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চারতলায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। জারিফের শরীরের ৩৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে এবং শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার অবস্থা সংকটাপন্ন।

কিছুক্ষণ পর হাবিবুর রহমান ছেলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আইসিইউয়ের সামনে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের মধ্যে জারিফ ছোট। তারা আমার সম্পদ, আমার সবকিছু। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি চাই সে আমার বুকে ফিরে আসুক।’

জারিফের মামা আবু মো. শাহরিয়ার জানান, জারিফ ও তার পরিবার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে বাস করে। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। জারিফ তার দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট। প্রতিদিন সকালে তার মা রাশেদা ইয়াসমিন তাকে স্কুলে পৌঁছে দেন। দুর্ঘটনার দিনও স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরে যান তিনি। জারিফ একাই বাসায় ফিরে আসার কথা ছিলো। স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে স্বজনরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান, কিন্তু সেখানে তাকে খুঁজে পাননি। পরে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে উত্তরা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তার বাবা হাবিবুর রহমানকে জানানো হয়, জারিফ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং তার অবস্থা গুরুতর। এরপর দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মঙ্গলবার বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় এবং অবস্থা খারাপ হলে বিকেলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে জারিফ লাইফ সাপোর্টে আছে।