• ২রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিচার্জ

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত আগস্ট ১, ২০২৫, ২৩:০৭ অপরাহ্ণ
আন্দোলনকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিচার্জ

ছবি:: ইত্তেফাক

সংবাদটি শেয়ার করুন....

‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে আসা একদল তরুণের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ও পুলিশের লাঠিচার্জের পর শাহবাগ ত্যাগ করেছেন সেই আন্দোলনকারীরা, যারা জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে আসছিলেন।

শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে তাদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এ সময় কিছুটা লাঠিপেটা করে পুলিশ। এর মাধ্যমে টানা ৩২ ঘণ্টার অবরোধের অবসান হয় এবং শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল শুরু হয়।

অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া তথাকথিত ‘প্রকৃত’ জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে আব্দুল খালেক নামের একজন বলেন, “সরকার যদি সনদ না দেয়, তাহলে ৫ তারিখে আবার আন্দোলনে ফিরব। তবে আমরা সাধারণ মানুষের কষ্ট দিয়ে আন্দোলন করতে চাই না। এই জায়গায় যারা বসেছিল, তাদের মধ্যে স্বার্থান্বেষী অনেকে ছিল।”

এর আগে, শাহবাগ মোড়ে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে অবস্থান নেয় ‘জুলাইযোদ্ধা সংসদ’-এর সদস্যরা। তারা স্লোগান দেন—‘জুলাই সনদ দিতে হবে’, ‘টালবাহানা চলবে না’, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জবাব দাও’। ফলে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাঁটাবন ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ আশেপাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। রোগী পরিবহনেও ভোগান্তি হয়।

সন্ধ্যার দিকে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা একদল তরুণ এসে অবরোধকারীদের সরে যেতে বলেন। তারা ব্যারিকেড সরিয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন এবং অবস্থানকারীদের মাইক বন্ধ করতে বলেন। এ সময় সড়কে বিছানো ত্রিপলও সরিয়ে দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে অবরোধকারীরাও ওই তরুণদের ‘ভুয়া’ দাবি করে। দুই পক্ষ একে অপরের ‘জুলাই যোদ্ধার’ পরিচয়পত্র দেখতে চায়। এতে উত্তেজনা বাড়ে এবং কয়েক দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং আন্দোলনকারীদের তৈরি করা মঞ্চ ভেঙে ফেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুল ইসলাম বলেন, “দুই দিন ধরে অবরোধ চলছে, মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। যারা আজ এসে সরিয়ে দিল, তারা নিজেদের গুলির চিহ্ন আর পরিচয়পত্র দেখিয়েছে, তাই মনে হচ্ছে ওরাই আসল।”

অবরোধকারীদের একজন মো. ইয়াছিন বলেন, “আমার পিঠে পুলিশ পেটাচ্ছে। পিজি হাসপাতাল থেকে যারা এসেছিল, তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। তারা বাইরের লোক, আমাদের আন্দোলন ব্যর্থ করতে চায়।”

আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ জানান, “পুলিশ ও অন্য একটি গ্রুপ একসঙ্গে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের দুইজন এখন হাসপাতালে ভর্তি এবং আরও অনেকে আহত। আমরা এখন রাজু ভাস্কর্যে একত্রিত হচ্ছি। পরবর্তী কর্মসূচি পরে জানাবো।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “আমরা খুব বেশি লাঠিপেটা করিনি। যারা অবরোধকারীদের সরিয়েছে, তারা বলেছেন—ভুয়া পরিচয়ে কেউ আন্দোলন করলে প্রকৃত যোদ্ধাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, সেটি দেখেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রকৃত আহতরা এসে তাদের সরে যেতে বলেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে বড় ধরণের সংঘাত না হয় তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।