ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর অনুমতিক্রমে এই বিচার কার্যক্রম আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পাশাপাশি মামলার আসামি হিসেবে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের রাজাকারের সন্তান ও নাতিপুতি বলে মন্তব্য করেন। এরপর আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী কর্মীরা ব্যাপক ও পদ্ধতিগতভাবে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেড় হাজার ছাত্র-জনতা নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি কার্যকর করেন। ১৪ জুলাই ঢাবির তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে আলাপচারিতার অডিও রেকর্ড থেকে নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। সেই নির্দেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যার দায়েও একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জন নিরীহ নাগরিককে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর এটি ছিল তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া প্রথম কারাদণ্ড।