আসছে ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক ঘিরে ইউক্রেনে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই বৈঠকে পুতিন কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে ফাঁদে ফেলবেন এবং একইসঙ্গে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দখল আরও বাড়াবেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রন্টলাইনে লড়াইরত এক ইউক্রেনীয় সৈনিক তারাস বলেন, ‘কোনো অলৌকিক কিছু হবে না, পুতিন ট্রাম্পকে বোঝাতে চেষ্টা করবেন যে, ইউক্রেনই শান্তি চায় না।’
গত কয়েক মাসে রুশ বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব দোনেৎস্কে প্রায় দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। পশ্চিমা সূত্র বলছে, রাশিয়া অন্য ফ্রন্টে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার বিনিময়ে পূর্ণ দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের নিয়ন্ত্রণ চাইতে পারে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো ভূখণ্ড ‘উপহার’ দেওয়া হবে না, বরং এখনই স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন।
এই বৈঠক থেকে ইউক্রেনকে বাদ দেওয়ার আশঙ্কায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন জরুরি আলোচনায় বসছে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, ব্রিটেন, ফিনল্যান্ডসহ নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো বলেছে, শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাম্পকে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় কূটনীতিকরা।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানিয়েছেন, ট্রাম্প, পুতিন ও জেলেনস্কির ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার দখলে থাকা উত্তর সুমি অঞ্চলের একটি গ্রাম তারা পুনর্দখল করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক থেকে শুধু আকাশপথে হামলা স্থগিতের মতো সীমিত সমঝোতা হতে পারে, যা রাশিয়াকে নতুন করে হামলার প্রস্তুতির সুযোগ দিতে পারে। ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাই মিত্রোখিন বলেন, ‘পুতিন কয়েক মাস সময় নিয়ে দোনেৎস্ক পুরোপুরি দখল করার চেষ্টা করবেন, তারপর আবার সংঘাত শুরু হবে।’
যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ইউক্রেনজুড়ে মানবিক সংকটও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুধু সেনা নয়, নিখোঁজ রয়েছে হাজারো সাধারণ মানুষ। পশ্চিম ইউক্রেনে নিখোঁজ সৈনিকদের সন্তানদের জন্য বিশেষ গ্রীষ্মকালীন শিবিরে চলছে দলগত থেরাপি ও পুনর্বাসন কার্যক্রম। সংগঠকরা বলছেন, ‘লাখ লাখ শিশু যুদ্ধের মানসিক আঘাতে জর্জরিত। এটি এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।’