• ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিলারের দাদন বাণিজ্যে অস্থির চালের বাজার

বস্তায় ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১২:৪০ অপরাহ্ণ
মিলারের দাদন বাণিজ্যে অস্থির চালের বাজার
সংবাদটি শেয়ার করুন....

সরকারি গুদামে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত থাকলেও বাজারে চালের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে মিলারদের দাদন বাণিজ্যের কারণে। বোরোর মৌসুমে কৃষকের মাঠ থেকে মনপ্রতি ধান ১১০০-১২০০ টাকায় কিনে মজুত করছেন মিলাররা। পরে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিজেরাই দাম বাড়াচ্ছেন। ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। টানা তিন মাস ধরে এ পরিস্থিতি চলতে থাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম দ্রুত বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে এখন মোটা চাল কিনতে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে, সরু চালের দাম পৌঁছেছে কেজিপ্রতি ৯০ টাকায়। অথচ সরকারি তদারকির ঘাটতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মিলারদের হাতে চলে গেছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্য কিনতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সরকারি গুদামে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২২ লাখ ৮ হাজার ৯২৯ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯১৬ টন, গম ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮১০ টন এবং ধান রয়েছে ৮০ হাজার ৩১৩ টন। একই সঙ্গে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারেও চালের কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিটি দোকানেই পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল পাওয়া যাচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বোরো মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তিনি জোরালো তদারকির আহ্বান জানান।

নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন মিল এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা ৩৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা তিন মাস আগে ছিল ৩৫০০ টাকা। নাজিরশাইল ২৫ কেজি বস্তা ২০০০ টাকা, আগে ছিল ১৮০০ টাকা। বিআর ২৮ চালের ৫০ কেজি বস্তা এখন ২৯০০ টাকা, আগে ছিল ২৭০০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চালের ৫০ কেজি বস্তা এখন ২৭০০ টাকা, আগে ছিল ২৫০০ টাকা। রাজধানীর কাওরানবাজার ও বাদামতলীতে পাইকারি পর্যায়ে মিনিকেটের ৫০ কেজি বস্তা ৩৯০০ টাকায়, নাজিরশাইলের ২৫ কেজি বস্তা ২১৫০ টাকায়, বিআর ২৮-এর ৫০ কেজি বস্তা ২৯৫০ টাকায় এবং স্বর্ণা চালের ৫০ কেজি বস্তা ২৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাওরানবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বোরোর মৌসুমে দাম কমার কথা থাকলেও উল্টো বেড়েছে। মিলারদের দাদন বাণিজ্যের কারণেই এ অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০-৮৭ টাকায়, নাজিরশাইল ৯০ টাকা, বিআর ২৮ ও পাইজাম ৬৫ টাকা এবং স্বর্ণা ৬০ টাকায়।

ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণত বোরো মৌসুমে চালের দাম কমে, কিন্তু এবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাজারে তদারকির অভাব স্পষ্ট।

খুচরা বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, মিলাররা তিন মাস ধরে দাম বাড়িয়ে চাল দিচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারের অনুমোদনে আমদানিকৃত চাল বাজারে এলে দাম কিছুটা কমতে পারে।

নওগাঁ চালকল মালিক সমিতি জানায়, ধানের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। জিরাশাইল ও কাটারি ধানে মনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেশি দামে কেনায় চালের পাইকারি দামও বেড়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বাজারে তদারকি চলছে এবং অবৈধভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।