• ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনে এআই যা করতে পারে না

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১৬:৫৫ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনে এআই যা করতে পারে না
সংবাদটি শেয়ার করুন....

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন মুহূর্তেই ভিডিও এডিট করছে, স্ক্রিপ্ট লিখছে, বিজ্ঞাপনের ভিজ্যুয়াল বানাচ্ছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন শিল্পে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন—এআই কি পুরো শিল্পকে বদলে দেবে, নাকি মানুষের জায়গা দখল করবে?

প্রযোজক হিসেবে প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি—ডিজিটাল এডিটিং থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থান পর্যন্ত প্রতিটি প্রযুক্তিই এসেছে এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে যে এবারই বিজ্ঞাপনের সমাপ্তি। কিন্তু আমরা এখনো টিকে আছি। হ্যাঁ, এআই কাজের ধরণ বদলাবে, কিন্তু বাংলাদেশে অন্তত পাঁচটি বিষয় আছে যা এখনো এআই করতে পারে না—আর সেগুলোই প্রমাণ করে প্রযোজকরা অপরিহার্য।

১. সংস্কৃতির সাথে সুর মিলিয়ে গল্প বলা

গ্রামীণফোনের ‘৫ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার’ বিজ্ঞাপন—যেখানে মা-ছেলের বিচ্ছেদ আর হৃদয়ে ধরা গান—এখনো আবেগ জাগায়। এআই স্টাইল নকল করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশি দর্শকের হৃদস্পন্দন বুঝতে পারে না। বিদায়ের কষ্ট, বর্ষার নীরবতা কিংবা নস্টালজিয়ার গান—এসব অনুভবের গল্প বুনতে পারে কেবল মানুষ।

২. ব্র্যান্ড আর প্রতিভার সাথে বিশ্বাস তৈরি

বিরাট কোহলিকে নিয়ে Royal Challenge Naya Sher ক্যাম্পেইনে কেবল তারকাকে যুক্ত করা নয়, বরং আলোচনার পথ পার হওয়া, ব্র্যান্ডের ইমেজের সাথে সামঞ্জস্য আনা আর প্রোডাকশনের মান মিলিয়ে নেওয়া ছিল আসল চ্যালেঞ্জ।
এআই ক্লায়েন্টকে ফোনে আশ্বস্ত করতে পারে না, কিংবা শুটিংয়ের মাঝপথে পরিবর্তন এলে মানিয়ে নিতে পারে না।

৩. সেটের বিশৃঙ্খলা সামলানো

বাংলাদেশে শুটিং মানেই অনিশ্চয়তা—লোকেশন ডুবে যায়, জেনারেটর নষ্ট হয়, রাস্তা বন্ধ হয়। প্রযোজকের কাজ অর্ধেক লজিস্টিক, অর্ধেক কূটনীতি আর অর্ধেক সৃজনশীল সমাধান। এআই বিকল্প পরিকল্পনা সাজাতে পারে, কিন্তু সমুদ্রতটে পানিতে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা চালু রাখতে পারে না।

৪. সংকটে নেতৃত্ব দেওয়া

কোভিড-১৯ এ প্রযোজকরা সহকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা নিয়ে। এটি কনটেন্ট বানানো নয়—এটি ছিল দায়িত্ব। এআই-এর নেই সহানুভূতি, নেই নৈতিকতা। সংকটে নেতৃত্ব মানুষেরই কাজ।

৫. জীবন্ত মনে হয় এমন গল্প বলা

এআই স্ক্রিপ্ট মিশিয়ে নতুন লেখা বানাতে পারে, কিন্তু সে বাসে চড়ে না, গলিতে হাঁটে না, কিংবা লোকেশন মালিকের সাথে দর কষাকষি করে না। বাংলাদেশের সূর্যাস্ত বা মানুষের অভিজ্ঞতা সে দেখে না।
আমাদের বিজ্ঞাপনগুলো জীবনের প্রতিচ্ছবি, আর সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য হয় মানুষের বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা থেকেই।

ভবিষ্যৎ হবে সহযাত্রী, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়

এআই পোস্ট-প্রোডাকশন দ্রুত করবে, মার্কেট রিসার্চে সাহায্য করবে। কিন্তু সম্পর্ক গড়া, সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা বোঝা আর বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প বলা মানুষের হাতেই থাকবে। ভবিষ্যৎ মানে প্রযোজক বনাম এআই নয়—বরং প্রযোজক ও এআই একসাথে।
দিনশেষে বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য শুধু বিক্রি নয়—মানুষকে অনুভব করানো। আর সেটাই এখনো কেবল মানুষের কাজ।