• ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় বাড়ছে ক্ষুধা , তীব্র অপুষ্টিতে সোয়া ৩ লাখ শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ
গাজায় বাড়ছে ক্ষুধা , তীব্র অপুষ্টিতে সোয়া ৩ লাখ শিশু
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ইসরায়েলের লাগাতার হামলা ও অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেল তিনটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে আরও আট শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। গত প্রায় দুই বছরে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজায় অপুষ্টিতে অন্তত ২৮১ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে শিশু ১১৪ জন।

অপুষ্টির শিকার শিশুদের চিকিৎসায় অন্তত ১০টি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া ও নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু হাসপাতালের পরিচালক আহমদ আল-ফারা।

আবু সালমিয়া বলেন, শুধু শিশু নয়, গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশও অপুষ্টিতে আক্রান্ত। এটি এখন গাজার অন্যতম প্রধান সংকটে পরিণত হয়েছে এবং এ থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

আল-ফারা জানান, তাঁর হাসপাতালে বর্তমানে ১২০টি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ধরনের শিশুদের সারা জীবন ভোগান্তি পোহাতে হবে।

অন্যদিকে দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজা নগর প্রশাসনিক অঞ্চল ও আশপাশের এলাকায় এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। এতে অন্তত ৫ লাখ ১৪ হাজার মানুষ খাদ্যসংকটে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিগগিরই মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ ও দক্ষিণের খান ইউনিসেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

যদিও ইসরায়েল এই দুর্ভিক্ষের দাবি অস্বীকার করেছে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আইপিসির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একে ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’ ও ‘মানবতার ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছেন। মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, গাজার দুর্ভিক্ষ সরাসরি ইসরায়েল সরকারের কর্মকাণ্ডের ফলাফল।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ইসরায়েলের উচিত নিজেদের তৈরি করা দুর্ভিক্ষ অস্বীকার না করা। যেসব দেশের প্রভাব রয়েছে, তাদের এই সংকট সমাধানে নৈতিক দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব টম ফ্লেচার বলেন, এই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের পরিকল্পিত বাধার কারণে খাদ্য ঢুকতে না পারায় আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

মিসর সীমান্তে কয়েক হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক মাসের পর মাস অপেক্ষমাণ রয়েছে। মার্চ থেকে অবরোধ জারি থাকায় এগুলো ঢুকতে পারছে না। মে মাস থেকে সীমিত পরিমাণে কিছু ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

এদিকে, নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসপার ভেল্ডক্যাম্প ইসরায়েলের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব সমর্থন না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন।

অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণমাধ্যমবিষয়ক কর্মকর্তা শাহেদ ঘোরেইশিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি ইসরায়েলপন্থী ভাষা ব্যবহার না করে গাজাবাসীদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিলেন।

শুক্রবার রাত থেকে ইসরায়েলের নতুন হামলায় গাজায় আরও ৭১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে। মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েই মারা গেছেন ২ হাজার ৭৬ জন। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) আশপাশে।

সব মিলিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬২২ জনে। একই সময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৩১ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে শিশু রয়েছে ২১০ জন।