• ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতকে মোকাবিলায় নতুন রকেট কমান্ড গড়ল পাকিস্তান, এর বৈশিষ্ট্য কী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ২৭, ২০২৫, ১৪:৩৫ অপরাহ্ণ
ভারতকে মোকাবিলায় নতুন রকেট কমান্ড গড়ল পাকিস্তান, এর বৈশিষ্ট্য কী
সংবাদটি শেয়ার করুন....

পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নতুন এক সামরিক কাঠামো ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, সেনাবাহিনীতে গড়ে তোলা হয়েছে আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি)। এটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘সব দিক থেকে শত্রুকে আঘাত হানতে সক্ষম’।

১৩ আগস্ট ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে শরিফ বলেন, এ উদ্যোগ পাকিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তানে ‘শত্রু’ বলতে মূলত বোঝানো হয় দেশটির প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে। দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। ওই ঘোষণার মাত্র এক সপ্তাহ পর ভারত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওডিশা থেকে ‘অগ্নি-৫’ মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এর পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ১০০ মাইল)।

যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের এআরএফসি গঠনের সঙ্গে ভারতের ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সরাসরি সম্পর্ক নেই।

তবে এআরএফসি গঠনের সিদ্ধান্ত এসেছে চলতি বছরের মে মাসে হওয়া পাকিস্তান-ভারতের টানা চার দিনের সংঘাতের পর। ওই সংঘাতে দুই দেশ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ লড়াই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাকৌশলের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। প্রায় তিন দশক ধরে দেশটি মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর ভরসা করে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বাস্তবে কখন সেই অস্ত্রের ব্যবহার করবে, তা নিয়ে ছিল অস্পষ্ট অবস্থানে।


এআরএফসি আসলে কী

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ নতুন রকেট কমান্ড নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এআরএফসি হচ্ছে সেনাবাহিনীর নতুন এক শাখা। এর মাধ্যমে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীভূত করা হবে। অর্থাৎ প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন, ব্যবহার, সংরক্ষণ—সব দায়িত্ব ছড়ানো–ছিটানো কমান্ডের পরিবর্তে একসঙ্গে একটি নতুন কমান্ডের হাতে আসবে।

পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশনের (এসপিডি) হাতে। আর কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ‘ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)’।

এসপিডির সাবেক সেনাকর্মকর্তা নাঈম সালিকের মতে, এআরএফসি পারমাণবিক সক্ষমতার অস্ত্রব্যবস্থার পরিবর্তে মূলত প্রচলিত গাইডেড রকেটব্যবস্থা নিয়েই কাজ করবে।

ভারতের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অবশ্যই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে রকেট কমান্ড আসলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ।

‘প্রচলিত কামানের পাল্লা যেখানে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার (১৯ থেকে ২২ মাইল), এআরএফসি সেখানে এমন গাইডেড রকেটের ওপর জোর দিচ্ছে, যেগুলো পুরোপুরি প্রচলিত ব্যবস্থা ও পারমাণবিক সক্ষমতাহীন’, বলেন নাঈম সালিক।


এআরএফসির প্রয়োজন কেন হলো

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ নতুন সামরিক কাঠামো ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বা মে মাসের সংঘাতের সরাসরি প্রতিক্রিয়া নয়; বরং বহুদিনের চিন্তাভাবনার ফল।

তুঘরাল ইয়ামিন মনে করেন, ভারতের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অবশ্যই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। তবে রকেট কমান্ড আসলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি বলেন, পাকিস্তান আগেই স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে ঝুঁকেছিল। তাঁর মতে, পারমাণবিক মিশন সামলাবে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড, আর প্রচলিত হামলার দায়িত্ব হবে রকেট ফোর্সের।

ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) শিক্ষক মনসুর আহমেদ বলেন, সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশই যুদ্ধের প্রচলিত কৌশলগত বিকল্প তৈরি করেছে। তাই ভারতের বাড়তে থাকা পাল্টা আক্রমণক্ষমতার মুখে পাকিস্তানের এআরএফসি আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি পূরণ করছে।


এআরএফসির অধীন কোন ক্ষেপণাস্ত্র আসবে

পাকিস্তানের হাতে আছে নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো স্থল থেকে স্থল, আকাশ থেকে স্থল ও স্থল থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এআরএফসি মূলত স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করবে।

নাঈম সালিকের মতে, এআরএফসির হাতে বর্তমানে ফাতেহ-১ (পাল্লা সর্বোচ্চ ১৪০ কিমি) ও ফাতেহ-২ (২৫০–৪০০ কিমি) রকেট রয়েছে। মে মাসের সংঘাতে এগুলো ব্যবহারও করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি হাতফ-১ ও আবদালি ক্ষেপণাস্ত্রও আছে। এগুলোর পাল্লা ৫০০ কিলোমিটারের কম।

মনসুর আহমেদ বলেন, নতুন কমান্ড পাকিস্তানকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে গভীরভাবে হামলা চালানোর সুযোগ দেবে, আবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারও করতে হবে না।

‘এআরএফসির মূল লক্ষ্য, বহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপব্যবস্থা ও নির্ভুল প্রচলিত আঘাতক্ষমতা গড়ে তোলা। এতে পাকিস্তানের ‘কুইড প্রো কো প্লাস’ কৌশল কার্যকর হবে; যা ভারতের প্রতিরোধ কৌশলের জবাব’, বলেন তিনি।