জিডিপিতে গৃহকর্মের অবৈতনিক কাজের অবদান ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে অতিথি ছিলেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আকতার এবং ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলী সিংহ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিনা বেতনে, অদেখা নয়: বাংলাদেশ নারীদের বিনা বেতনে সেবা এবং গৃহস্থালির কাজ স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউএন উইমেন বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাপী উইমেন কাউন্ট প্রোগ্রামের সহায়তায় এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (এইচপিএসএ) এর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যত্নের কাজের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিনা বেতনে গৃহস্থালি এবং যত্নের কাজ—যেমন রান্না করা, লন্ড্রি পরিষ্কার করা, গৃহস্থালি ব্যবস্থাপনা এবং শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য সেবা করা—অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে নারীরা বেশিরভাগ কাজই সম্পাদন করেন, যা অপরিহার্য হলেও প্রচলিত অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান থেকে বাদ দেওয়া হয়।
বিবিএস সময় ব্যবহার জরিপ ২০২১ এবং শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ এর উপর ভিত্তি করে এইচপিএসএ অনুমান করে যে ২০২১ সালে অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যত্নের কাজের অবদান ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ১৮.৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ অবদান ছিল নারীদের।
অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম বিশ্লেষক মিসেস নুবায়রা জেহিন একটি কেয়ার ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করেন। এটি একটি টুল যা ব্যক্তিদের প্রতিদিন অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যত্নের কাজে ব্যয় করা সময় পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
বিবিএসের ডেমোগ্রাফি ও স্বাস্থ্য শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর আসমা আখতার এইচপিএসএ প্রতিবেদনের মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন। যেখানে নারীদের অবৈতনিক কাজের মাত্রা এবং এর অর্থনৈতিক মূল্য তুলে ধরা হয়।
বিবিএস জানায়, আইন ও নীতিমালার সঙ্গে অবৈতনিক কাজকে একীভূত করার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এছাড়া জাতীয় বাজেট এবং উন্নয়ন কৌশলগুলিতে গৃহস্থালির কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। উপযুক্ত যত্নের চাকরি এবং অবৈতনিক কাজের উপর টেকসই অর্থায়ন এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষ এবং ছেলেদের যত্নের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করা প্রয়োজন।