• ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জোট গঠনে যে পথে হাঁটছে বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:২২ পূর্বাহ্ণ
জোট গঠনে যে পথে হাঁটছে বিএনপি-জামায়াত
সংবাদটি শেয়ার করুন....

আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনি জোট গঠনেও পর্দার আড়ালে চলছে নানা আলোচনা ও তৎপরতা।

নানা ইস্যুতে কয়েকটি দল আন্দোলন নিয়ে রাজপথে থাকলেও ভেতরে ভেতরে তারাও নির্বাচনমুখী। কোন দল কোন জোটে যাবে, তা নিয়েও জনমনে কৌতূহল রয়েছে।

তবে দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আলাদা পথেই হাঁটছে। দল দুটি পৃথক জোট গঠনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিরও জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া বামপন্থি দলগুলোর একটি জোট এবং কয়েকটি ইসলামি দল মিলে আরেকটি জোট গঠনের গুঞ্জন রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

জোট গঠন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্তত বিশটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে যুগান্তরের। আলাপকালে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার কোনো দলের এককভাবে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। তারা হয় জোট, না হয় আসন সমঝোতা করে ভোটে অংশ নেওয়ার পক্ষে। দলগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত যেটুকু তৎপরতা তা থেকে জানা যায়, সমমনা দল ও জোট নিয়ে বিএনপি একটি বড় জোট করতে পারে। পাশাপাশি কয়েকটি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতাও হতে পারে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামি দলগুলোর পৃথক জোট বা আসন সমঝোতা হতে পারে। পাশাপাশি এনসিপিরও জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে উদারপন্থি বলে পরিচিত কয়েকটি দলকে নিয়ে। এছাড়া বাম ও ইসলামি দলগুলোর আরও দুটি পৃথক জোট গঠনের তৎপরতা আছে। তবে এখন যা-ই করা হোক না কেন নির্বাচনের তফশিলের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জোট কিংবা সমঝোতার বিষয়টি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

এবারের নির্বাচন সহজ নয়-এমনটা ধরে বিএনপিও নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা হিসাব-নিকাশ করছে। বিএনপি কোন ফরম্যাটে বা কাঠামোতে জোট করবে, তা নিয়ে এখন বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হচ্ছে। তবে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে-দলগুলোর মধ্যে এমন আলোচনা আছে। জানা গেছে, জোট গঠনে অনেকটাই নির্ভার দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি।

অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলটি এবার ডান-বাম ও ইসলামি দলগুলোকে একসঙ্গে নিতে চায়। দলগুলো হলো-লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১১টি দল, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামি দলও বিএনপির সঙ্গে জোটে যুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি দল অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামেও যুক্ত। এছাড়াও এনসিপি নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল যখন ঘোষণা হবে, তখন আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করব। যদি জোটের প্রয়োজন হয়, তাহলে জোট হবে। এখন সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দলগুলো নিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন যুগপৎভাবে করেছি। কিন্তু জোট গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দিইনি।’

অন্যদিকে জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলোও বসে নেই। জামায়াত জোট কিংবা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেবে-এটা অনেকটা নিশ্চিত। ইতিমধ্যে জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ নানা দাবিতে জামায়াতসহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাগপা অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করছে। তবে জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করছে তা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে বা পরে স্পষ্ট হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘ইসলামপন্থি দলগুলো যাতে এক জায়গায় থাকতে পারে সেই চেষ্টা করছি। আলাপ-আলোচনা চলছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট ও সমঝোতার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। নির্বাচন এলেই এমন ঘটনা আগেও দেখা গেছে। তবে এবার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় এখন দৃশ্যপটে নেই আওয়ামী লীগ। তাই ভোট ও মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি এখন দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী জায়গায় রয়েছে। আবার অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছে এক সময়ের বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ও মিত্রদল জামায়াতে ইসলামীও। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট গঠন অথবা সমঝোতাসহ নানা কৌশল গ্রহণের পরিকল্পনা সঠিকভাবে না নিতে পারলে নেতৃত্বে থাকা দল প্রত্যাশিত ফলাফল নাও পেতে পারে।