সোয়া ১২ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে খাতা দেখা ও ফল তৈরির কাজ চলছে। জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসির মতো এইচএসসিতেও খাতা মূল্যায়নে ‘সহানুভূতি নম্বর’ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বোর্ডগুলো। পরীক্ষার্থী যা লিখেছে, সেই অনুযায়ী যেন নম্বর পায়, কম বা বেশি নয়, সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে পরীক্ষার্থীরা খাতায় ২৮ পেলে ৩৩ করে পাশ করানো বা দুই থেকে পাঁচ নম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে গ্রেড উন্নীত করার যে অলিখিত নিয়ম চালু ছিল, তা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে চলতি বছর থেকে।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রথম গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। ২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় তা প্রবর্তন করা হয়। ডিভিশন পদ্ধতিতে ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড ডিভিশন, স্টার মার্ক এবং প্রতিটি বিষয়ে ৮০ বা তার বেশি নম্বরে লেটার মার্ক পাওয়ার বিধান বাতিল হয় ২০০১ সালে। যেখানে ৮০ নম্বরের ওপরে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫ বা এ+ ধরে সাতটি গ্রেডে ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর প্রতি ১০ নম্বরের ব্যবধানে একটি গ্রেডে বদল ধরা হয়। সর্বশেষ ৩৩ নম্বরের নিচে যারা পায়, তাদের ফেল বা এফ গ্রেড ধরা হয়। ২০২১ সালে এসএসসিতে পাশের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। দুই দশকের ব্যবধানে ২০২১ সালে তা ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশে উন্নীত হয়। এর পেছনে প্রধানত সহানুভূতি নম্বরকেই কারণ মনে করা হয়। ২০০১ সালে যেখানে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিল, সেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জনে। ২০২৪ সালে পাশের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘সহানুভূতি’র নম্বর চলতি বছর তুলে দেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে গত ১০ জুলাই প্রকাশিত সাধারণ, কারিগরি, মাদ্রাসাসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাশ করেছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। গতবারের চেয়ে এবার পাশের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ৪৩ হাজার ৯৭ জন।
জানা গেছে, এবার এইচএসসির পরীক্ষকরা বোর্ড থেকে খাতা নেওয়ার সময় কড়া নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, প্রশ্নপত্রে যা চাওয়া হয়েছে, উত্তরপত্রে শুধু তা-ই বিবেচনায় আনতে হবে। অতিরিক্ত তথ্য লিখলে বা যথাযথ উত্তর না লিখলেও নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার যে এক ধরনের রীতি অতীতে চালু ছিল, তা করা যাবে না। এছাড়া মূল প্রশ্নের নির্ধারিত উত্তর না লিখলে নম্বর পাওয়া যাবে না। আংশিক উত্তর লিখলে পূর্ণ নম্বর দেওয়া যাবে না। এদিকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের ওপরও নজরদারি বৃদ্ধি ও নতুন শৃঙ্খলাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। খাতা দেখায় গাফিলতি বা অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যে আট জন পরীক্ষককে সব ধরনের পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে আজীবনের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগে ৭১ জন পরীক্ষককে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে খাতা দেখায় গাফিলতির অভিযোগ আসায় অনেককে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, এবার খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা যেন মনোযোগ দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করেন এবং প্রশ্নপত্রের নির্ধারিত মানদণ্ড মেনে নম্বর দেন, সেজন্য বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত মূল্যায়নে যেন কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি অবিচার করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, ‘চলতি বছরের এসএসসির মতো আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত যোগ্যতা প্রতিফলিত হবে। আমরা যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন নিশ্চিত করছি। প্রতিটি খাতার মূল্যায়ন সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে, যাতে প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত হয়।’