দীর্ঘ সময়ের বিমানযাত্রা শেষে নিউইয়র্কে পৌঁছেই কোনো বিশ্রাম না নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
বৈঠকে সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে পুনরায় আশ্বস্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্ক পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে পরিচালিত ভ্রান্ত তথ্য প্রচারসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে মার্কিন প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সার্ক প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে কোনো সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এ সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের সংযুক্তি দেশের উন্নয়নকে বহুগুণে বাড়াতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া তিনি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার ভাষায়, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করলে আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারব।’
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সার্জিও গোরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সফরের প্রথম দিনেই সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বেলজিয়ামের রানি মথিল্ড প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে তার সঙ্গে বৈঠক করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে তিনি অন্তত ১০টি কর্মসূচিতে যোগ দেন। এর মধ্যে ছিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং বৈশ্বিক কর্মসূচি।
প্রধান উপদেষ্টা দিন শুরু করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিনি ইউএনজিএর উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে বৈঠক এবং দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট (এফ৪ডি): ১৩তম বার্ষিক অফিশিয়াল ফার্স্ট লেডিস লাঞ্চ’-এ অংশ নেন।
বিকালে তিনি ‘সামাজিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থায়ন: সরকারি ও বেসরকারি খাতের নেতাদের বৈঠক’ শীর্ষক আলোচনায় যোগ দেন। সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আসেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তিনি সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সফরে প্রধান উপদেষ্টা ম্যানহাটনের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে অবস্থান করছেন, যা তার অস্থায়ী আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
