চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে অপহৃত হয়েছেন ৭১৫ জন। গত বছর একই সময়ে অপহৃত হয়েছিলেন ৩৪০ জন। অর্থাৎ এক বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের জুলাই মাস অপহরণের দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ রেকর্ড করেছে। ওই মাসেই অপহৃত হয়েছেন ১০৯ জন। জানুয়ারিতে ১০৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৮ জন, মার্চে ৮৩ জন, এপ্রিলে ৮৮ জন, মে মাসে ৮২ জন, জুনে ৮০ জন এবং আগস্টে ৯০ জন অপহৃত হন। এতে দেখা যাচ্ছে, গত আট মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিনজন অপহৃত হয়েছেন।
তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে মোট ৬৪২ জন অপহৃত হয়েছিলেন। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রথম আট মাসে অপহৃত হয়েছিলেন ৩৪০ জন, মাসে গড়ে ৪২.৫ জন। অথচ চলতি বছরে একই সময়ে মাসিক গড় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯.৩৮ জনে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে মাসে গড়ে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৮৬টির বেশি, যা ২০২৪ সালের গড় ৫৩.৫টির তুলনায় প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি। সিজিএস-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত ছয় বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, ‘মামলার সংখ্যার পেছনে প্রকৃত চিত্র আড়াল থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে মামলা হয় না। দেশে কার্যকর আইন ও আইনের শাসন না থাকায় অপরাধ কমেনি, বরং বেড়েছে।’
অপরাধবিষয়ক পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা যায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অপহরণের হার অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। ওই বছরের শেষ চার মাসে দিনে গড়ে ২.৫২ জন অপহৃত হন। আর পুরো বছরের গড় দাঁড়ায় দিনে ১.৭৬ জনে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দৈনিক গড় দাঁড়িয়েছে প্রায় তিনজন (২.৯৮ জন)। অথচ ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দৈনিক গড় অপহরণের সংখ্যা ছিল মাত্র ১.৩৩ জন।
অপরাধবিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যখন কোনো অপরাধ বেড়ে যায়, তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেটির বৈধতা দেওয়ার জন্য নানা ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। এটা আসলে অপেশাদারিত্বের লক্ষণ, যা অপরাধীদের সুযোগ করে দেয়। রাজনৈতিক স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহৃত হওয়ায় অপরাধ আরও বাড়ছে। দৈনিক গড়ে তিনজন অপহৃত হওয়ার অর্থ হলো দেশে আইনের শাসনে বড় ঘাটতি রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অপহরণের পেছনে পারিবারিক ও রাজনৈতিক শত্রুতা কিংবা যৌন নিপীড়নের মতো নানা কারণ থাকলেও আর্থিক কারণই প্রধান। চাঁদাবাজ চক্রের পাশাপাশি পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর সম্পৃক্ততাও এসব ঘটনায় লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৬০ হাজার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২০ হাজারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মসংস্থানের অভাব অর্থনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে, যার ফলে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।