• ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন স্থাপনা বিধিমালায় দীর্ঘদিন সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল

বরিশাল থেকে জুয়েল শাহিন
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ২৩:৪১ অপরাহ্ণ
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন স্থাপনা বিধিমালায় দীর্ঘদিন সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল
সংবাদটি শেয়ার করুন....

গত ২ বছর আগে বাড়ী নির্মানের জন্য ডিজাইন করে প্লানের জন্য সিটি কর্পোরেশনে জমাদিয়েছেন বরিশাল নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামিলুর রহমান । এর পর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি । মাঝে মধ্যে নগরভবনে গিয়ে খোজ নিয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয় তাকে। এই একই অবস্থা বরিশাল নগরীতে জমি কিনে একটু বসবাসের আসায় বাড়ী করার জন্য প্লানের আবেদন করা প্রায় ৭ শত পরিবারের।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে বরিশাল টাউন কমিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৮৭৬ সালে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটিতে উন্নীত হয় । ১৯৮৫ সালে একে একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয় । পরবর্তীতে ২০০২ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (সংশোধন) আইন ২০০২ এর মাধ্যমে পৌরসভা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। এর পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সব কিছুই ভালো ভাবে চলে আসছিল। ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তন ও বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ জনসংখ্যার এই নগরী দীর্ঘ ৬/৭ বছর যাবৎ নগর বাসি রয়েগেছে অবহেলিত।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সময়ে ভবনের প্লানের অনুমোদন নেওয়া নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মহসিন সরদার বলেন, সাদিকের কাছে ৫ তলা ভবনের প্লান অনুমোদনের জন্য দেই। এর পর সাদিক নিজে ডেকে নিয়ে বলে আপনি অনুমোদন পাবেন। তবে আমাদের নিয়ম মানতে হবে । সেটা কি তা আপনি যার মাধ্যমে এসেছেন তার কাছ থেকে জেনে দিতে হবে। পরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। তার ২ মাস পরে আমার বাড়ীর প্লান অনুমোদন দিয়েছে। বাড়ীর কাজ শুরু করার পর পরতে হয় আরেক ঝামেলায় তা হচ্ছে বিসিসির রোড ইন্সপেক্টর (আড়াইদের) হয়রানি। নির্মান কাজে নানান ত্রুটি দেখিয়ে উৎকোচ দাবী করে তারা। তাদের দিতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এই অবস্থা প্রকাশ্যে চলে আসলেও যা দেখার কেউ ছিল না বলে দাবী করেন মহসিন সরদার। সাদিকে আমলে প্রায় ৬ শতর অধিক প্লান অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেখানে ছিল অনভিজ্ঞ স্থাপনা বিধিমালা।
সাদিকের বিদায়ের পরে তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ২০২৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়। নগরবাসী আশায় বুক বাধে এবার হয়তো তাদের প্লান অনুমোদনের সেই দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে। তার আমলে বেশ কিছু প্লান দেয়া হয়েছে বলে বিসিসি সূত্র দাবী করলেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ হাটেন তার ভাতিজার দেখানো পথেই। মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এর সময়ে একই ধরনের প্রকৌশলী দ্বারা প্লান অনুমোদন দিয়েছে ৩২০টি।
২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার গনঅদ্ভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের সাথে সাথে পালিয়ে যায় মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। সাথে তার ছেলে ও পরিষদের অধিকাংশ কাউন্সিলর। পরে অবিভাবক শুন্য হয়ে পরে নগর ভবন । পরে অন্তবর্তীকালিন সরকার দ্বায়িত্ব নেয়ার পর নিয়োগ করা হয় প্রশাসক। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো: শওকত আলী প্রশাসক হিসেবে দ্বায়িত্ব পান। পাশাপাশি নগর ভবনের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা দ্বায়িত্ব পান কাউন্সিলরদের।
সম্প্রতি প্রশাসক তার পরিষদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন কর্মপন্থা নির্ধারনের জন্য । ঐ বৈঠকে উঠে আসে প্লান অনুমোদরে জন্য জমা পড়া আবেদনের বিষয়।
সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ ১৯৯৬ ও ২০০৮ (স্থাপনা বিধিমালা)’র কোনটি তারা বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে আলোচনা সিদ্ধান্ত হয়। পরিষদ ১৯৯৬ বিধিমালা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। বৈঠকে পরিষদ বলেন বিগত দিনে স্থাপনা বিধিমালা বা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেনি বিগত কোন পরিষদ। তারা তাদের ইচ্ছে মতো প্লান দিয়েছে। এখন নগর ভবনে ১ থেকে ৬ তলা ভবনের প্লানের জন্য আবেদন জমা পরে আছে ৬৮০টি। আর তার উপরে হাইয়েস ভবন ৩৭ টি।
এই আবেদনের বিষয়ে ১৯৯৬ স্থাপনা বিধিমারা বাস্তবায়ন ও প্লান অনুমোদনের জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১ থেকে ৬ তলা ভবনের প্লানের জন্য গঠিত কমিটিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সদস্য ১০ জন। আর সাত তলা থেকে তদুর্ধ ভবনের প্লান অনুমোদনের জন্য প্রশাসকসহ সদস্য ১২জন । এই দুই কমিটি যাচাই বাছাই ও সাইট ভিজিট করে প্লান অনুমোদন দেবেন বলে জানিয়েছেন বিসিসির পাবলিক রিলেশন অফিসার পিআরও আহসান রোমেল।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর আর্কিটেক্টস সাইদুর রহমান বলেন , বিগত পরিষদ প্লান অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্থাপনা বিধিমালা ১৯৯৬ বা ২০০৮ দুটোর একটিও পালন করেনি। তারা তাদের ইচ্ছেমত প্লান অনুমোদন দিয়েছে । এখন নতুন প্রশাসক বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো: শওকত আলী দ্বায়ীত্ব নেয়ার পর পরিষদের বৈঠকে বিধিমালা ১৯৯৬ অনুসরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। শিগ্রই প্লানের জন্য করা সকল আবেদন অনুমোদন ও নিস্পত্তি করা হবে। সে ক্ষেত্রে ১৯৯৬ স্থাপনা বিধিমালায় বাড়ীর সামনে ব্যক্তি মালিকানা ১০ ফিট বা সরকারী ১২ ফিটের রাস্তা বাধ্যতামুলক থাকতে হবে নচেত প্লান পাবেনা আবেদন কারীরা।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন দেশের অন্যতম মহানগরী । বর্তমানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ । বর্তমানে ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিটি কর্পোরেশনে ৩০জন সাধারণ আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং ১০ জন সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর পদ শুন্য হওয়ায় কর্মকর্তাদের দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে । তারা নিয়মিত জনগনের নাগরিক সেবা প্রদান করে আসছেন।
বিগত দিনে যারা ২০০৮ স্থাপনা নিয়মে প্ল্যান হাতে পেয়েছিল তারা ১৯৯৬ এর সুবিধা পাবে কিনা সে বিষয়ে উক্ত সভায় কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।