শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত খসড়ার ওপর অংশীজনের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। নির্ধারিত ইমেইলে (dsunivl@moedu.gov.bd) বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবের কাছে সাত কার্যদিবসের মধ্যে খসড়া অধ্যাদেশের ওপর মতামত পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এই অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়।
অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী অবস্থান থাকলেও এখন তা বেড়ে চতুর্মুখী হয়েছে। ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে বুধবার একযোগে নিজ নিজ কলেজে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকেরা। অন্যদিকে শিক্ষকদের দাবিকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
খসড়া অনুযায়ী চলমান ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ সেশন শুধু ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি সনদ পাবে। এর আগের সেশনগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সনদ পাবে। এতে প্রতিবাদে নেমেছেন অন্য সেশনের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নামে অধ্যাদেশ হলে কলেজগুলোর স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করছেন ঢাকা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন এবং কলেজগুলোর স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্ত হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদ বিলুপ্তির আশঙ্কাও রয়েছে। তারা চান, সাত কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হোক, তবে সেটি পৃথক ক্যাম্পাসে এবং অধিভুক্তমূলক কাঠামোয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কলেজের সম্পদও কলেজের নামে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
দুপুরে ঢাকা কলেজে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক শিক্ষক মানববন্ধন করছেন। তারা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে সাত কলেজের সমস্যা আরও বাড়বে। বিশেষত ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ কমবে। উচ্চমাধ্যমিকের মানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষকরা মানববন্ধন থেকে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে কলেজগুলোর নাম-পরিবর্তন, লোগো ও সম্পদের সুরক্ষা, বিদ্যমান বিষয় বহাল রাখা এবং পৃথক ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি রয়েছে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘‘এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে সাত কলেজ নিয়েই কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই সাত কলেজকে বিলুপ্ত করতে চাইছে।’ এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর ইউজিসির সামনে সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষক মানববন্ধন করেছিলেন।
এদিকে মঙ্গলবার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীরাও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তারা বলেন, নতুন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ বা অন্যত্র করা উচিত। একই প্রস্তাব শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাও দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে।
শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে জানান, খসড়া অধ্যাদেশে সব সেশনের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। খসড়া সংশোধন না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি সাত কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।