• ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় একদিনে নিহত আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ণ
গাজায় একদিনে নিহত আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও অন্তত ৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সাতজন নারী ও দুজন শিশু ছিলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আহলি স্টেডিয়াম গাজার বহু বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, যেখানে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা নাজওয়া নামের এক নারী আল জাজিরাকে বলেন, ‘হাতে যা ছিল তাই নিয়ে বেরিয়েছি। আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা আতঙ্কে আছি। যাতায়াত করাও ব্যয়বহুল। জিনিসপত্র আনার সামর্থ্য নেই।’

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে ভয় সঞ্চার করছে এবং হাজার হাজার মানুষকে পালাতে বাধ্য করছে। তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গাজার অধিকাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই গাজা সিটি ছেড়ে চলে গেছেন এবং সেনারা সেখানকার অভিযানে আরও এগোবে। তবে জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশন জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই কার্যক্রম প্রকৃতপক্ষে গাজায় স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫,৪১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গাজার যুদ্ধ ইসরায়েলবিরোধী তীব্র সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যারা শিশু হত্যা করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, তারা মানবতার যোগ্য নয়।’ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারআ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা গাজার জনগণের সঙ্গে আছি। এই যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।’

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে আল জাজিরাকে জানান, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নীরব আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। অন্যদিকে, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ জানান, ওয়াশিংটন ‘আশাবাদী, এমনকি আত্মবিশ্বাসী’ যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের হাতে পৌঁছে গেছে।

তবে, পূর্ববর্তী শান্তি প্রচেষ্টা বারবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্বারা ভেস্তে গেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন, যারা ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

এর আগে, গত ১৮ মার্চ নেতানিয়াহু একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেন এবং পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপ করেন, যার ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং বহু মানুষ না খেয়ে মারা যান। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।