আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তোড়জোড় শুরু করেছে বিএনপি। এর মধ্যে যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জোর তৎপরতা চলছে। এছাড়া ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫০টির মতো আসন ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলটিতে।
সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আগামী মাসের মধ্যে দল ও জোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চান নেতারা।
দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা চাইছেন দ্রুত শরিক বা মিত্র দলগুলোর মনোনয়নের কাজ চূড়ান্ত করতে; যাতে নির্বাচন ও প্রার্থিতা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি কাটে এবং তারা নির্বাচনী এলাকায় কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
ইতিমধ্যে কোনো কোনো দল ও জোটের প্রধানকে মৌখিকভাবে প্রার্থী তালিকা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদিকে বুধবার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক ১২-দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। মনোনয়নের ব্যাপারে আমরা কয়েক দিনের মধ্যে বসবো।’
বিএনপির দুজন নেতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের কোনো কোনো শীর্ষ নেতাকে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মনে করি, নির্বাচনে আমাদের কৌশল কী হবে, কাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়ব- আগে এগুলো ঠিক হওয়া উচিত। এরপর প্রার্থীর তালিকা।’
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একাধিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, তারা শুধু মনোনয়ন বা প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন না; এর আগে নির্বাচনের কৌশলসহ সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করতে চান।
এ বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র হিসেবে নির্বাচনের কৌশল ও সমীকরণ নিয়ে আমাদের বৈঠক হবে। একই সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে যে অনৈক্য, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।’
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বাম ধারার দলগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁর জন্য বিএনপির দিক থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ দায়িত্বপ্রাপ্ত। ইসলামপন্থীসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে আছেন- নজরুল ইসলাম খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বরকতউল্লা (বুলু)।
বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সভায় কলকাতার বাংলা সংবাদপত্র এই সময়-এ প্রকাশিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গও আলোচনায় ওঠে বলে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান।
সভায় মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, সাক্ষাৎকারে যেভাবে তার নামে কথাগুলো এসেছে, তিনি সেভাবে বলেননি। সভায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে এ বিষয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে বলেন।
পরে মঙ্গলবার মধ্যরাতে এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, এই সময়-এ যে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়, সেটি ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল (ভার্চুয়াল) ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।