
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবং সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও নৌচলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বর্জ্য নিঃসরণ রোধে ‘টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ’ জারি করেছে সরকার। এ আদেশ অনুযায়ী, হাউসবোট বা নৌযানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও কোনো পার্টি আয়োজন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি আইনের ক্ষমতাবলে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই সুরক্ষা আদেশ জারি করা হয়েছে।
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরের জন্য প্রতিপালনীয় নির্দেশনাসমূহ:
ক. হাওর এলাকায় পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার, বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন, গাছ কাটা এবং জলজ বন ধ্বংস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
খ. হাওরের জলজ গাছের ডাল (হিজল, করচ ইত্যাদি) কেটে ঘের নির্মাণ বা মাছের আশ্রয় তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে না।
গ. সংরক্ষিত বা অভয়াশ্রম এলাকায় জেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো পর্যটক বা নৌযান প্রবেশ করতে পারবে না।
ঘ. সরকারি অনুমতি ছাড়া হাওরের ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
ঙ. অনুমতি ব্যতীত জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দেওয়া যাবে না।
চ. ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে এমন কোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
ছ. শিক্ষা সফর বা বিদেশি পর্যটক পরিবহনের জন্য জেলা প্রশাসনের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
জ. যাত্রীসংখ্যা নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে এবং মাছ ধরার যন্ত্র বহন করা যাবে না।
ঝ. দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
ঞ. পর্যটক ও ট্যুর অপারেটরদের স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
ট. হাউসবোট বা নৌযানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও পার্টি আয়োজন করা যাবে না।
ঠ. শব্দদূষণকারী ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
ড. একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন করা যাবে না।
ঢ়. নিষিদ্ধ জাল বা বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
ণ. অনুমতি ছাড়া বালু, পাথর বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।
ত. শুষ্ক মৌসুমে কোনো জলাধারের পানি সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করা যাবে না।
থ. ট্যুর অপারেটররা ১০০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের নৌযান পরিচালনা করতে পারবে না।
দ. হাওরে কোনো বর্জ্য নিঃসরণ করা যাবে না।
ধ. হাওর অঞ্চলে পাকা সড়ক নির্মাণ এড়িয়ে চলতে হবে; জরুরি প্রয়োজনে অনুমোদন ও পরিবেশগত মূল্যায়ন অপরিহার্য।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, এ সুরক্ষা আদেশ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আদেশ লঙ্ঘন করলে বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।